ছবি সংগৃহীত।
বছর দুয়েক হল ইলেকট্রিক ইন্ডাকশন কুকটপে দোসা করছেন এলগিন রোডের হকার এন রাজাস্বামী। রোজ চার-পাঁচ ঘণ্টা রাঁধতে বিদ্যুতের জন্য মাসে আড়াই-তিন হাজার টাকা খরচ হয় তাঁর। রাজাস্বামীর হিসেব, ১৯ কিলোগ্রামের বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করতে হলে লাগত অন্তত সাড়ে চার হাজার টাকা।
শরৎ বসু রোড়ে নিরামিষ পদের পসরা সাজিয়ে বসা পবন দাস বা পার্ক স্ট্রিটের চা-অমলেট বিক্রেতা পূজা দাসও ইলেকট্রিক ইন্ডাকশন কুকটপপন্থী। পবনের মতে, খাবার গরমটরম করা বা ছুটকোছাটকা নানা কাজেও ইন্ডাকশন ঢের সস্তা এখন।
গৃহস্থের গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৮৮৬ টাকার শৃঙ্গ স্পর্শ করার দিনে চাঁদনি চকের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম বিপণির আধিকারিক বলছিলেন, “রোজ গোটা ২০ ইলেকট্রিক ইন্ডাকশন আভেন বিক্রি হবেই! গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে এই চাহিদার সম্পর্ক আছে।" উল্টোডাঙার একটি বিপণিও জানাচ্ছে, ইন্ডাকশনের ‘স্টক’ হুহু করে ফুরোচ্ছে।
গত বছরের জুলাইয়ে ৬০১ টাকা থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম। সর্বভারতীয় এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বিজনবিহারী বিশ্বাস বলেন, “নতুন করে গ্যাস সিলিন্ডার রিফিলের হার কমবেশি ২০ শতাংশ কমেছে। উজ্জ্বলা যোজনার নিম্নবিত্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি।” গত অর্থবর্ষে উজ্জ্বলার গ্রাহক-সংখ্যা দেড় কোটির বেশি থেকে কমে ৭৫ লক্ষে এসে দাঁড়ায়। দ্য এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্তারা মনে করেন, নীতি আয়োগের জাতীয় শক্তি নীতি রূপায়ণে সবার হেঁশেলে রান্নার পরিবেশবান্ধব শক্তির প্রসারেও জোর দিতে পারত কেন্দ্র। তাতে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নও চাঙ্গা হত।
বিদ্যুৎ-বিশেষজ্ঞদের হিসেব, চার জনের একটি পরিবারে ইন্ডাকশন কুকটপে রোজ তিন ঘণ্টা রান্না হলে মাসে তিন ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। তার খরচ বড়জোর ৬৮০ টাকা। এলপিজি সিলিন্ডারের দামের
সঙ্গে ফারাকও স্পষ্ট। তবে ইলেকট্রিক ইন্ডাকশন কুকটপে রান্না এখনও শহুরে সংস্কৃতি। এই প্রযুক্তিতে সড়গড় হওয়ার ক্ষেত্রে জড়তাও আছে। কলকাতার পুরকর্তারাও নিরাপত্তার কথা ভেবে শহরের হকারদের রান্নার জন্য বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কথা ভাবেন। তা অবশ্য কার্যকর হয়নি।
ইন্ডাকশনে আগুন না-জ্বেলে গরমে ঢের কম ধকলে যে-কোনও জায়গায় রান্না করা সম্ভব। দূষণও কম। কারও কারও মত, ভাজাভুজি গোছের রান্না বিদ্যুতের ওয়াটের হেরফেরে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। বাঙালি, চিনে ও দক্ষিণ ভারতীয় রান্নার নামী রেস্তরাঁ চেনের অন্যতম কর্ণধার তথা শেফ সুশান্ত সেনগুপ্ত মনে করেন, সরাসরি আগুনের ছোঁয়াচ দরকার, কাবাব গোছের এমন কিছু খাবার ছাড়া বিদ্যুৎচালিত প্রযুক্তিতে সব রান্নাই সম্ভব। শুক্তো থেকে মাংসের ঝোল, দিব্যি হবে। সুশান্তবাবুর মতে, “গ্যাসের তুলনায় ইন্ডাকশনে রান্না দ্রুত হবে। এবং এখন গ্যাসের যা দাম বাড়ছে, তাতে খরচও কম থাকবে। তা ছাড়া, রান্নাঘরের অসহ্য গরমের থেকেও মুক্তি।” বিদ্যুৎচালিত প্রযুক্তিতেই মানুষ ক্রমশ নির্ভরশীল হবে বলে সুশান্তবাবুর দাবি।