বন্ধ হয়ে গেল কোচবিহার বিমানবন্দর।—ফাইল চিত্র।
শুধু নিরাপত্তা নয়, রাজ্য সরকার কোচবিহার বিমানবন্দর থেকে দমকল পরিষেবা তুলে নেওয়ার ফলে বন্ধ হয়ে গেল কোচবিহার বিমানবন্দর। আজ, সোমবার, নোটাম (নোটিস টু এয়ারমেন বা নোটাম) জারি করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সে কথা জানাবে।
বিমানবন্দরের এক কর্তা জানান, বিমান ওঠানামার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই কারণে, বিশ্বের প্রতিটি বিমানবন্দরে দমকল থাকা বাধ্যতামূলক। কোচবিহারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আধুনিক দমকলের গাড়ি ও অন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকলেও তা চালানোর দায়িত্বে ছিলেন রাজ্য সরকারের দমকল বিভাগের কর্মীরাই। রবিবার কোচবিহারের দমকল দফতর থেকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, তাঁরা বিমানবন্দরে পরিষেবা দিতে পারবেন না। তার পরেই কোচবিহার বিমানবন্দর থেকে কোনও বিমানকেই এখন কোচবিহার থেকে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান।
এই বিমানবন্দরে এমনিতে কোনও বিমান পরিষেবা নেই। কিন্তু বিতর্ক শুরু হয়েছিল শনিবার বিজেপির সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক একটি ছোট বিমানে করে সেখানে পৌঁছনোর পরে। তিনি দাবি করেন, ১ অগস্ট থেকে এই বিমানে করে যাত্রী পরিষেবা শুরু হবে কোচবিহার-বাগডোগরার মধ্যে। যাত্রী নিয়ে বিমানটি গুয়াহাটিও নাকি যাতায়াত করবে। এই ধরনের যাত্রী পরিষেবা চালাতে গেলে কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রকের কাছ থেকে অনুমতি প্রয়োজন। নিশীথবাবুর দাবি, তাঁর কাছে সেই অনুমতি রয়েছে। যদিও বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এমন কোনও অনুমতির কথা তাঁদের জানানো হয়নি।
এই বিতর্কে বিমানবন্দরে রাখা রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা ও অন্য পরিষেবা তুলে নেওয়া হয়। তার মধ্যে ছিল দমকল পরিষেবাও। শোনা যায়, রবিবার বিমানটি বাগডোগরা যাবে। তা আর সম্ভব হয়নি। রবিবার কোচবিহার বিমানবন্দরের অধিকর্তা বিপ্লব মণ্ডল বলেন, “নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছে নিশীথবাবু দাবি করেন, রাজ্যের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোমবার থেকেই পথে নামবেন মানুষ। এ নিয়ে কোচবিহারের জেলাশাসক বা পুলিশ সুপার কিছু বলতে চাননি। বিপ্লববাবু জানান, তিনি প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁকে স্পষ্ট কেউ কিছু জানাননি। তিনি বলেন, “৪৬ জন রক্ষী ছিলেন। এখন কাউকেই দেখছি না। আমাকে লিখিত কেউ কিছু জানায়নি।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, বিমান চলাচল সম্পর্কিত কিছুই জানানো হয়নি রাজ্য সরকারকে। কারও ভাড়া করা বিমানের দায়িত্ব রাজ্য সরকার কেন নেবেন, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, “বিমান চলাচল নিয়ম মেনে শুরু হলে নিরাপত্তা থাকবে।”
রবিবার বেলা ১২টায় বিমানবন্দরে দেখা যায়, গেটে রক্ষী নেই। অন্য দিন সেখানে রাইফেলধারী পুলিশ থাকেন। গেটের পাশে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘর। কেউ বিমানবন্দরে ঢুকতে চাইলে, সেই ঘরে গিয়ে নাম-ফোন নম্বর ও কারণ নথিবদ্ধ করতে হয়। রবিবার সেই ঘরেও কেউ ছিলেন না। উৎসুক মানুষ বিমান দেখবেন বলে গেট থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন। দূরে পার্কিং বে-তে ৯ আসনের শেসনা বিমানটি দাঁড়িয়ে রয়েছে।