ফাইল চিত্র।
তাঁরা আবেদন করেননি। তা সত্ত্বেও ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচির প্রেক্ষিতে ৮৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলি করা হয়েছে এবং ২২ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের নতুন স্কুলে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। বুধবার শিক্ষা দফতরের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শিক্ষক শিবিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, ‘সাধারণ বদলি’র নামে এই ভাবে শিক্ষকদের বদলি নিয়মবহির্ভূত।
ওই ৮৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার বদলির বিজ্ঞপ্তি বেরোনোর পরে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েক জনকে পাশের স্কুলে বদলি করা হয়েছে। মাত্র ৫০ মিটার দূরের স্কুলে বদলির ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা জানান, বদলি চেয়ে তাঁরা আবেদন করেননি। তা সত্ত্বেও বদলি করা হয়েছে। আদেশনামায় লেখা হয়েছে, ‘সাধারণ’ বদলি-ব্যবস্থা অনুসারেই এই বদলি।
আবেদন না-করা সত্ত্বেও শিক্ষকদের বদলি করা হচ্ছে কী ভাবে?
শিক্ষা সূত্রের খবর, ‘সাধারণ বদলি’র তকমা দেওয়া হলেও এর পিছনে আছে সরকারের ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি। পাড়ায় পাড়ায় ছোটখাটো সমস্যার মোকাবিলা করার ওই প্রকল্পে কোনও বাসিন্দা হয়তো লিখেছেন, তাঁদের এলাকার স্কুলে শিক্ষক কম। সেখানে শিক্ষক দেওয়া হোক। সেই অনুযায়ী যে-স্কুলে শিক্ষকপদ খালি, নতুন নিয়োগের বদলে তড়িঘড়ি কোনও শিক্ষককে সেখানে বদলি করা হয়েছে। তাঁরা যে-হেতু বদলির আবেদন করেননি, তাই বদলির নির্দেশনামা পেয়েও অনেকে নতুন স্কুলে যোগ দেবেন কি না, সেই বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।
শিক্ষা দফতরের এ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে ২২ জানুয়ারির মধ্যে পুরনো স্কুল থেকে রিলিজ় অর্ডার নিয়ে নতুন স্কুলে যোগ দেওয়ার নির্দেশে শিক্ষকদের একাংশ বেজায় ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, না-চাইতেই যে-ভাবে বদলি করা হচ্ছে, সেটাকে কোনও ভাবেই সাধারণ বদলি বলা যেতে পারে না। এটা প্রশাসনিক বদলি। অথচ সাধারণ বদলির নামে জোর করে তাঁদের বদলি করা হচ্ছে। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘স্কুলশিক্ষা দফতরের আইন অনুযায়ী মিউচুয়াল (দুই স্কুলের শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে) বদলি হোক বা সাধারণ বদলি— শিক্ষক-শিক্ষিকার আবেদন ছাড়া কোনওটাই সম্ভব নয়। এখানে যেটা হয়েছে, সেটা প্রশাসনিক বদলি। প্রশাসনিক বদলি কখনওই সাধারণ বদলি নয়। তাই আবেদন ছাড়াই যাঁদের বদলি করা হয়েছে, তাঁদের নিয়োগপত্রে সাধারণ বদলির বদলে অবশ্যই প্রশাসনিক বদলি কথাটি লেখা দরকার।’’
কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের অভিযোগ, পাড়ায় সমাধানের নামে যে-সব স্কুল থেকে শিক্ষক নিয়ে অন্য স্কুলে পাঠানো হয়েছে, সেই সমস্ত স্কুলেও কিন্তু অতিরিক্ত শিক্ষক নেই। তাদের প্রশ্ন, শিক্ষককে না-জানিয়ে জোর করে বদলি করা হচ্ছে কেন? অভিযোগ, পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি সফল করার তাগিদেই এ ভাবে জোর করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যেখানে খুশি পাঠিয়ে দিচ্ছে শিক্ষা দফতর।
শিক্ষা দফতরের তরফে এ দিন বদলি সংক্রান্ত ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন কমিশনার অব স্কুল এডুকেশন অনিন্দ্যনারায়ণ বিশ্বাস। এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁকে বার বার ফোন এবং এসএমএস করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি উত্তর দেননি।