ট্রেলার দেখেই জাগুন, প্রাক্তনকে বর্তমান

বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব বাড়েই। কিন্তু সাপে শেষ পর্যন্ত কাটলে তবেই কি বিপদ বোঝা যাবে? নাকি বিপদ হতে পারে বুঝে আগাম সতর্কতা নেওয়া হবে?অনেকটা এই গোছের বিতর্কই এখন প্রবল ভাবে মাথাচ়াড়া দিয়েছে সিপিএমের রাজনীতিতে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব বাড়েই। কিন্তু সাপে শেষ পর্যন্ত কাটলে তবেই কি বিপদ বোঝা যাবে? নাকি বিপদ হতে পারে বুঝে আগাম সতর্কতা নেওয়া হবে?

Advertisement

অনেকটা এই গোছের বিতর্কই এখন প্রবল ভাবে মাথাচ়াড়া দিয়েছে সিপিএমের রাজনীতিতে! বিতর্কের এক বিন্দুতে দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। অন্য প্রান্তে দলের বর্তমান কাণ্ডারী সীতারাম ইয়েচুরি। প্রাক্তন এক বার বর্তমানের লাইন খারিজ করে দিচ্ছেন। বর্তমান আবার পাল্টা যুক্তি নিয়ে ফিরে আসছেন প্রাক্তনকে অতিক্রম করতে! যেমন, এখন ইয়েচুরি বলছেন, কবে ফ্যাসিবাদ বিকশিত হবে— তার অপেক্ষায় বসে না থেকে মধ্যপথেই তাকে রুখে দেওয়ার দায়িত্ব বামেদের নিতে হবে। সোজা কাথায় যার মানে কারাটের যুক্তিকে পিছনে ফেলে এক ধাপ এগোনো। পার্টি কংগ্রেস যখন প্রায় দু’বছর দূরে, সেই সময়ে দলের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে এমন তর্ক-যুদ্ধ সাম্প্রতিক সিপিএমে বিরল!

বিশাখাপত্তন মে গত বছরের পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন কারাট। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বেই সেই পার্টি কংগ্রেস দলের লাইন বেঁধে দিয়েছিল কংগ্রেস এবং বিজেপি থেকে সমদূরত্ব রাখার। তার পরে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সঙ্ঘ পরিবারের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। এমতাবস্থায় ইয়েচুরি চাইছেন, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে এক ছাতার তলায় এনে এই বিপদের মুখোমুখি দাঁড়াতে। আর কারাট তাঁর না-কংগ্রেস, না-বিজেপি নীতি থেকে সরতে নারাজ। দ্বন্দ্ব এখানেই। এক জন এক সংবাদপত্রে কলম ধরছেন, তো অন্য জন আর এক জায়গায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। লড়াই চলছে সেয়ানে সেয়ানে!

Advertisement

ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব সম্প্রতি সিপিএমের পলিটব্যুরোকে নোট পাঠিয়ে বলেছিলেন, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের হাত ধরে ভারতে ফ্যাসিবাদী প্রবণতার আমদানি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নিয়ে অহেতুক তর্ক না করে সিপিএম-সহ বামপন্থীদের উচিত সব রকম ভাবে ফ্যাসিবাদী শক্তির পথ আগলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। হাবিবের এই মত নস্যাৎ করে কারাট প্রথমে দলের মালয়ালম মুখপত্র, পরে কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্রে দু’টি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার পরে সর্বভারতীয় একটি ইংরেজি দৈনিকেও তিনি যা লিখেছেন, তার সারমর্ম একটাই— বিজেপি-র সরকার তথা সঙ্ঘ পরিবার যা করছে, তাকে বড়জোর আধিপত্যবাদী রাজনীতি বলা যেতে পারে। ফ্যাসিবাদের যে যে উপসর্গ লাগে, এই মুহূর্তে এ দেশের রাজনীতিতে সে সব দেখা যাচ্ছে না। তাঁর আরও বক্তব্য, বিজেপি অবশ্যই বিপদ। কিন্তু তার মোকাবিলা করার জন্য কংগ্রেসের হাত ধরার দরকার নেই। বামেরা নিজেরাই যথেষ্ট।

এ বার সেই যুক্তিকে খণ্ডন করতে আসরে নেমেছেন ইয়েচুরি। দলের বাংলা দৈনিক মুখপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘‘গত আড়াই বছরে আমরা যে ‘ট্রেলার’ দেখেছি, তার পরে আরএসএসের নেতৃত্বে পূর্ণ বিকশিত ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর, অন্ধকারাচ্ছন্ন বিপদকে কোনও ভাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া যায় না। যে কোনও মূল্যে এই বিপদকে মধ্যপথেই বাধা দিতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। এই বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের অঙ্গীকার।’’ অর্থাৎ প্রাক্তন যা-ই বলুন, ফ্যাসিবাদ ডালপালা মেলার অপেক্ষায় থাকতে নারাজ বর্তমান!

দলের মধ্যে কারাটপন্থীরা বলছেন, মধ্যপথেই বিপদ রুখে দেওয়ার ডাক দেওয়ার মানে তো মধ্যপথে দলের লাইনও রদবদল করে নেওয়া। কিন্তু পার্টি কংগ্রেস ছাড়া সে কাজ কী করে সম্ভব, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বিজেপি মোকাবিলায় সংগ্রাম একান্তই আরও তীব্র করতে হলে শুধু বাম ঐক্যেই ভরসা রাখতে চান তাঁরা। কিন্তু ইয়েচুরি আবার ‘জনগণের ঐক্যে’র ডাক দিয়ে দিয়েছেন! তাঁর বক্তব্য, ‘‘সমস্ত জনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এবং ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপরে, দেশের সংহতির উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামপন্থীরা তেমন সমস্ত শক্তিকে সমবেত করার চেষ্টা করবে, যারা এই পদক্ষেপগুলির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।’’

বাংলায় বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা ঠিক ছিল কি না, সেই বিতর্কে কারাট শিবির যত বার ধারালো আক্রমণে গিয়েছে, ইয়েচুরির ছত্রচ্ছায়ায় বঙ্গ ব্রিগেড তার প্রতিরোধ করেছে। এখন স্পষ্ট, লড়াই আর বাংলার ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক সীমায় নেই! ইয়েচুরির মধ্যপথেই রুখে দেওয়ার পাল্টা কারাট আবার কী আনেন, শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্ট ডাউন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement