বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা পিপিপি মডেলে বাংলা অথবা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গড়বেন। বিনিয়োগকারী সংস্থাই ঠিক করবে, কোন বোর্ডের অধীনে স্কুল হবে এবং তার ‘ফি’ কত হবে।
রাজ্য সরকার যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে স্কুল চালাতে চায় সে ইঙ্গিত আগে দিয়েছিলেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ। এ বার এই সংক্রান্ত একটি খসড়া ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে শিক্ষামহলে।
বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যে খসড়া নিয়ে এত জল্পনা, সেখানে কোনও সরকারি নির্দেশিকার নম্বর, নির্দেশিকা প্রকাশের দিনের উল্লেখ বা কারও সই নেই। ফলে এর সত্যতা নিয়েও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। এই খসড়া ঠিক নয় বলে বুধবার রাতে শিক্ষা দফতরের উচ্চমহলও দাবি করেছে। যদিও এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিক্ষামহলের একাংশ।
খসড়ায় জানানো হয়েছে, সরকার জমি, বাড়ি ও অন্যান্য পরিকাঠামো দেবে। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা পিপিপি মডেলে বাংলা অথবা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গড়বেন। বিনিয়োগকারী সংস্থাই ঠিক করবে, কোন বোর্ডের অধীনে স্কুল হবে এবং তার ‘ফি’ কত হবে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগও তারাই করবে।
এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র সংগঠন ডিএসও, শিক্ষক সংগঠন আবুটা। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্কর এ দিন বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ যদি হয়, তা শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের প্রাথমিক ধাপ বলেই মনে করতে হবে। এটা হলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত জাতীয় শিক্ষানীতির ছায়া বলে মনে হতে পারে।’’
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “৬ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুর শিক্ষা ‘শিক্ষার অধিকার আইন’-এ পড়ে। তার ব্যবস্থা করা যে কোনও সরকারের দায়িত্ব।” মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “এটা চালু হলে শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ‘টাকা যার শিক্ষা তার’ নীতিই কার্যকর হবে।” শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ-র রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “সাধারণ বাড়ির সন্তানেরা এই পিপিপি মডেলে শিক্ষার নাগাল পাবে না।” অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “পুরোটাই পিপিপি মডেলে হলে, শিক্ষা গ্রহণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও অভিযোগ করে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের একটি অভ্যন্তরীণ নোট চালাচালি চলছে। সেখানে সকলের মত নেওয়া হচ্ছে। তার মূল কথাটা হচ্ছে, কার্যত শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের দিকে নিয়ে যাওয়া। ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা।’’