ফাইল চিত্র।
বেতন বৃদ্ধি-সহ নানা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্বশিক্ষকেরা। এ বার তাঁদের বেতন নিয়ে ‘দুর্দশার’ ছবি উঠে এল স্কুলের অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ওই প্রশ্নপত্রের ছবি সমাজ মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
৪ জুলাই প্রথম পার্বিক মূল্যায়নের অঙ্ক পরীক্ষা নেওয়া হয় ওই স্কুলে। সেখানে একটি প্রশ্ন ছিল: ‘এক জন পার্শ্বশিক্ষক তাঁর তিন মাসের আয় দিয়ে দু’মাসের সংসার খরচ চালান। তাঁর মাসিক আয় ১২ হাজার টাকা হলে, তাঁকে সংসার চালাতে বছরে কত টাকা ধার করতে হয়?’ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘এই প্রশ্ন যদি কোনও পূর্ণসময়ের শিক্ষক পার্শ্বশিক্ষকদের একাংশকে অসম্মান করার জন্য করে থাকেন, তবে তার নিন্দা করি। কোনও পার্শ্বশিক্ষক হলে বলব, পরিস্থিতির কথা ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছনো উচিত হয়নি।’’
স্কুল সূত্রে খবর, প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেন স্কুলের ৪৩ বছরের পার্শ্বশিক্ষক বংশীলাল বাগ। তাঁর দাবি, ‘‘ব্যবসায়ী, গোয়ালা, চাষির মতো পেশার মানুষের উদাহরণ দিয়ে যদি প্রশ্ন হয়, তাহলে পার্শ্বশিক্ষকেরা কেন বাদ থাকবেন? এতে আমি অন্যায় কিছু দেখছি না।’’ সমুদ্রগড়ের নিচুচাপাহাটির বাসিন্দা বলেন, ‘‘১৮ বছর পার্শ্বশিক্ষকতা করে মাসে বেতন পাই ১২ হাজার টাকা! এতে সংসার চালানো কষ্টকর। প্রশ্নপত্র দেখে অভিভাবকেরা আমাদের সমস্যা বুঝবেন।’’
রাজ্য পার্শ্বশিক্ষক সমন্বয় সমিতির সম্পাদক শামিম আখতারের দাবি, ‘‘রাজ্যে প্রায় ৪২ হাজার পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন। অঙ্কের প্রশ্নের মধ্যে পার্শ্বশিক্ষকদের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি সমাজকে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এটি প্রতিবাদের একটি ধরন। আমরা তাঁর পাশে আছি।’’ পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের রাজ্যের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষেরও দাবি, ‘‘প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনেরবঞ্চনার কথা উনি তুলে ধরেছেন। এটি নীরব প্রতিবাদ।’’
এবিটিএ-র পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সুদীপ্ত গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘সমাজ মাধ্যমে ওই প্রশ্নপত্র দেখেছি। এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর বেতনও ওঁরা পান না। বারবার সরকারকে ওঁদের দাবি মেটাতে বলেছি।’’ যদিও পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা কোর কমিটির সদস্য পার্থপ্রতিম দেবনাথের দাবি, ‘‘এই প্রশ্নপত্র ছোটদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিবাদ অন্য ভাবেও করা যায়। সরকার পার্শ্বশিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল।’’ ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অঞ্জন পালিতেরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলের পাঁচ পার্শ্বশিক্ষক প্রচুর পরিশ্রম করেন। তাঁদের বেতন বাড়লে ভালই হয়। তবে ওই প্রশ্নপত্র যেহেতু এক জন পার্শ্বশিক্ষক করেছেন, তাই সেখানে পার্শ্বশিক্ষকদের উদাহরণ না দিলেই ভাল হত।’’