মেডিক্যালের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন এমসিআইয়ের

নতুন শিক্ষাবর্ষে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে সম্প্রতি সম্মতি জানিয়েছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)। অথচ পরিকাঠামোয় ঘাটতি থাকার কারণে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ আসনের অনুমোদন নিয়েই এ বার তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিল এমসিআই।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৬
Share:

এমসিআইয়ের পাঠানো চিঠি।—নিজস্ব চিত্র।

নতুন শিক্ষাবর্ষে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে সম্প্রতি সম্মতি জানিয়েছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)। অথচ পরিকাঠামোয় ঘাটতি থাকার কারণে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ আসনের অনুমোদন নিয়েই এ বার তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিল এমসিআই। গত ১৯ অগস্ট এমসিআইয়ের দফতর থেকে পাঠানো ওই চিঠি দিন কয়েক আগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছে। তাতে জানানো হয়েছে শিক্ষক-অধ্যাপকের অভাব থেকে উপযুক্ত লেকচার থিয়েটার পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। সে কারণেই তারা এই কলেজে এমবিবিএস পড়াশোনার স্বীকৃতি অব্যাহত রাখতে পারছেন না। তবে ওই সমস্ত ঘাটতিগুলি পূরণে সদিচ্ছার কথা জানিয়ে ১ মাসের মধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ ফের আবেদন করতে পারেন বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে। গত বছরও একই ভাবে এমসিআই এই মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষকে পরিকাঠামোর ঘাটতির কথা জানিয়েছিল। এক মাসের মধ্যে আবেদন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এই পরিস্থতির মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ আসনের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে আগামী ১ সেপ্টেম্বরের পর যে কোনও দিন এমসিআই পরিদর্শনে আসার কথাও জানিয়েছে। এখন তা নিয়েই দিশেহারা কলেজ কর্তৃপক্ষ। কেন না ইতিমধ্যেই ১৫০ আসনের অনুমোদনের ক্ষেত্রে শিক্ষক-অধ্যাপক থেকে ছাত্রছাত্রীদের পর্যাপ্ত হস্টেলের অভাবের কথা জানিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন এমসিআই। সেই সমস্ত পরিকাঠামোর অধিকাংশ এখনও গড়ে ওঠেনি। কলেজের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ১০০ আসনে ভর্তির স্বীকৃতি রয়েছে। তবে পরিকাঠামো ঠিকঠাক রয়েছে কি না তা দেখে কিছু খামতির কথা তারা জানিয়েছেন। সেই মতো ফের আবেদন করতে বলেছেন। তবে ১৫০ আসনের স্বীকৃতি এখনও এই মেডিক্যাল কলেজ পায়নি।’’ তাঁর কথায়, ১৫০ আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সম্মতি রয়েছে। সেই মতো পরিকাঠামো গড়ার কাজ হচ্ছে।

তবে কলেজে শিক্ষক-অধ্যাপকের অভাবের বিষয়টি অধ্যক্ষও স্বীকার করেন। মাস কয়েক আগে স্বাস্থ্য দফতর থেকে একযোগে এখানকার প্রচুর শিক্ষক-অধ্যাপককে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকেও সেই মতো শিক্ষক-অধ্যাপককে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বদলি করা হয়েছিল। তাঁদের অনেকেই এখনও পুরনো জায়গা ছেড়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যোগ দেননি। অথচ এই মেডিক্যাল কলেজ থেকে যাদের অন্যত্র বদলি করা হয়, তাঁদের সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে শিক্ষক-অধ্যাপকের ঘাটতি সমস্যা আগের থেকে বেড়েছে। তা নিয়েই চিন্তিত কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

তবে এক দিকে ১৫০ আসনে ভর্তির সম্মতি দেওয়া এবং অন্য দিকে ১০০ আসনেই পরিকাঠামো ঠিক নেই বলে চিঠি পাঠানো নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের শিক্ষক, অধ্যাপকদের একাংশ অসন্তোষ, প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ১০০ এবং ১৫০ আসনে পরিকাঠামো আলাদা ভাবে এমসিআইয়ের তরফে দেখা হচ্ছে। আলাদা দল এসে পরিদর্শন করছে। এর আগেও ১০০ আসনের ক্ষেত্রে পরিদর্শনে এসে তাঁরা কিছু খামতির কথা জানিয়েছিলেন। সেই মতো নতুন করে ফের আবেদনও করা হয়। ঘাটতির একাংশ ঠিক করা হয়। জুন মাসে সেই মতো তাঁরা ফের পরিদর্শন করেন। সে সময় পুরনো যে ঘাটতিগুলি উল্লেখ করেছিলেন, তার বাইরেও বেশ কিছু ঘাটতি রয়েছে বলে সংযোজন করেন। তাতেই সমস্যা বেড়েছে। স্বীকৃতির জন্য প্রতিবার আবেদন করতে ৩ লক্ষ টাকা ফি লাগে। তাঁদের দাবি, বারবার ঘাটতি দেখিয়ে ফি আদায়ের চেষ্টা হলে তো তাঁদের নিয়ে এরপর প্রশ্ন উঠবে। তবে ১৫০ আসনে ঘাটতির বিষয়টি তাঁরাও মেনে নিয়েছেন।

ওই শিক্ষকদের দাবি, পরিকাঠামোও আগের থেকে বেড়েছে। ১৫০ আসনের জন্য পরিকাঠামোর ঘাটতির বিষয়টি তুললে তা যুক্তিযুক্ত কিন্তু অনেক বছর ধরেই ১০০ আসনে স্বীকৃতি যেখানে মিলছে, সেখানে নতুন নতুন ঘাটতি সংযোজন করে ফের আবেদন করতে বলা কতটা যুক্তি সঙ্গত তাঁরা সেই প্রশ্ন তুলেছেন।

এমসিআই কর্তৃপক্ষ অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে ১০০ আসনের অনুমোদনের বিষয়ে পরিদর্শন করে তাঁরা বিভিন্ন খামতির কথা জানিয়েছিলেন। সেই মতো ওই সমস্ত ঘাটতি মেটানোর বিষয়টি জানালে ১০ জুন ফের পরিদর্শন করেন। গত ৫ অগস্ট এমসিআই-এর কার্যনির্বাহী সমিতির বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই মতো এমসিআই-এর সহসচিব এস সভিথা জানিয়েছেন, শিক্ষক-অধ্যাপক ১২ শতাংশেরও বেশি কম রয়েছে। ‘রেসিডেন্ট ডক্টর’-এর অভাব রয়েছে ১৫ শতাংশেরও বেশি। উপযুক্ত লেকচার থিয়েটার নেই। শিশুদের চিকিৎসার বহির্বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক ঘর রয়েছে। রোগীর শয্যায় গিয়ে এক্সরে করার ‘মোবাইল এক্সরে’ কম রয়েছে। গ্রামীণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা নেই। ডেফিব্রিলেটর, সেন্ট্রাল সাকশন যন্ত্র-সহ বেশ কিছু সরঞ্জাম নেই। রোগীদের অনেককেই মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। এ সব ঘাটতির কারণে ১০০ আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির স্বীকৃতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এমসিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement