মৃত বিজেপি কর্মী উলেন রায়। —নিজস্ব চিত্র।
উলেন রায়ের দেহের দ্বিতীয়বার ময়না-তদন্ত করতে হবে— সকালেই আদালতের এই নির্দেশ এসে পৌঁছয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু হাতে বাড়তি চিকিৎসক না থাকায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁদের দিয়ে প্রথমবারের ময়না-তদন্ত করানো হয়েছিল, দ্বিতীয়বারও তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া যাবে কি? তাতে যদি নতুন ভাবে আপত্তি ওঠে? এই বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে স্বাস্থ্যভবনে বার্তা পাঠান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জবাবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, সরকারি নিয়ম মেনে তিন জন ডাক্তারের উপস্থিতিতে উলেনের ময়না-তদন্ত হয়েছে। তা হলে সেই রিপোর্টে কী ভুল আছে, সেটা জানতে বৃহস্পতিবার আদালতের দ্বারস্থ হোক পুলিশ। এর পরে আদালত যা বলবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার উলেনের দেহের দ্বিতীয় ময়না-তদন্ত হয়নি। দিনভর অপেক্ষা করে বিরক্ত উলেনের আত্মীয়রা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ও। তিনি যাওয়ার সময়ে বলেন, ‘‘আদালত শুক্রবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে। আমরা অপেক্ষা করব।’’ এরই মধ্যে গুলি করে খুন ও তড়িঘড়ি ময়না-তদন্ত করার বিরুদ্ধে এনজেপি থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন উলেনের স্ত্রী মালতীদেবী। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, অভিযোগ হয়েছে, তদন্ত হবে।
সোমবার বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানের সময়ে প্রাণ হারান উলেন। সেই রাতেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত হয়। কিন্তু সেই রিপোর্ট মানতে চাননি বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা গজলডোবায় উলেনের বাড়িতে গিয়ে মালতীদেবীকে এই নিয়ে বোঝান। শেষে মালতী রাজি হলে দ্বিতীয়বার ময়না-তদন্তের দাবিতে উলেনের বোন শান্তিবালাদেবীর নামে জলপাইগুড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আবেদন করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে সেই দাবি মঞ্জুর করে দ্বিতীয়বার ময়না-তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক।
আরও পড়ুন: পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ উলেনের স্ত্রীর
আরও পড়ুন: মতুয়া মন জয়ে দরাজ মুখ্যমন্ত্রী
এ দিন সকালে সেই নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরে স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ প্রবীর দেব। তিনি বলেন, ‘‘এখানে যে চিকিৎসকরা দেহের ময়না-তদন্ত করেছেন, তাঁদেরই আবার তা করতে হবে। কারণ আর লোক নেই। তা করলে চলবে কি না, সেটা আগে থেকে জেনে নিয়ে কাজে নামা ভাল। তাই আমরা স্বাস্থ্যভবনে আদালতের নির্দেশ পাঠিয়ে পরামর্শ চেয়েছি।’’ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের দাবি, যে ভাবে ময়না-তদন্ত নিয়ে নানা অভিযোগ ইতিমধ্যেই তোলা হয়েছে, তাই পদ্ধতিগত ব্যাখ্যা পরিষ্কার না হলে নতুন করে অভিযোগ উঠতেও সময় লাগবে না। তা ভেবেই সাবধানী চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের একটি অংশের দাবি, দ্বিতীয়বার দেহের কাটাছেড়া করতে যে নির্দেশ আদালত দিয়েছে, প্রথম পর্বে তার সবগুলিই করা হয়েছে। কিন্তু আদালতে তা ভাল করে পুলিশ এবং সরকারি আইনজীবী জানাননি বলেই অভিযোগ। তা হলে হয়তো র্নিদেশ অন্যরকম হতে পারত, দাবি তাঁদের। পরে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হয়, ভুল কোথায় হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে জানতে আদালতেরই দ্বারস্থ হোক পুলিশ।