সেই অনুষ্ঠানের পোস্টার। স্থান বদলের আগে। ছবি: আইআইটি সূত্রে প্রাপ্ত।
খড়্গপুর আইআইটি-র উদ্যোগে দু’দিন ধরে হবে মূলত আয়ুর্বেদ চর্চার ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচনা। সেখানে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসাবে থাকার কথা যোগগুরু রামদেব এবং রবি শঙ্করের। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজ্ঞান চর্চায় যুক্ত একাধিক সংস্থা। ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’র দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে অপবিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসার করছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও আয়োজকেরা এই বিতর্কে কান দিতে রাজি নন।
প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত আইআইটি খড়্গপুর। বছর কয়েক ধরে সেখানে শুরু হয়েছে ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ। পোশাকি নাম ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’। গত বছর সনাতনী জ্ঞান ব্যবস্থার থিমে তাদের ক্যালেন্ডারে পুরাণ-কথা ঠাঁই পেয়েছিল। এ বার তাদের ‘আয়ুর্ধারা’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বাছাই নিয়ে তৈরি হল বিতর্ক।
রামদেব ও রবি শঙ্করকে অতিথি হিসাবে আনার এই সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করে ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’র অফিস সম্পাদক প্রত্যুষ শিকদার বলেন, “আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আয়ুর্বেদশাস্ত্রকে আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। এর জন্য প্রাচীন ঐতিহ্য না আঁকড়ে আধুনিক গবেষণা করা উচিত। কিন্তু রামদেব বা রবি শঙ্করেরা আয়ুর্বেদ, যোগচর্চার নামে একটি বিশেষ ধর্মীয় চেতনাকে উস্কে দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমে’র মাধ্যমে সেই অপবিজ্ঞানের প্রসার করতে চাইছে।’’ তাঁর দাবি, ওই যোগগুরুদের ডেকে বিজ্ঞানের মোড়কে উগ্র আধ্যাত্মিক চেতনা প্রসারের চেষ্টা হচ্ছে। এতে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে আইআইটির গৌরব।
খড়্গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা মনে করছেন না। তাঁদের বক্তব্য, যোগচর্চা ইতিমধ্যেই বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। রামদেব ও রবি শঙ্করের পরামর্শে হাজার হাজার মানুষ উপকৃতও হয়েছেন। খড়্গপুর আইআইটির ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর ইন্ডিয়ার নলেজ সিস্টেমে’র চেয়ারম্যান তথা অধ্যাপক জয় সেন বলছিলেন, “একই সত্য সমুদ্রের সন্ধানে যখন একাধিক নদীর ধারা এগিয়ে একত্রে মিলিত হয়, সেটাই বিজ্ঞান। যোগশিক্ষা, আয়ুর্বেদশাস্ত্র তো বিজ্ঞানেরই অংশ।’’ তিনি দাবি করেন, যোগশাস্ত্র বিশ্বে নোবেল জয় করেছে। তার পরে পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘কিছু লোক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, কিছু না জেনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।”
প্রাথমিক ভাবে আইআইটির ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল সায়েন্স সিটিতে। ৪ নভেম্বর সায়েন্স সিটির সামনে কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন প্রতিবাদীরা। ঘটনাচক্রে এর পরে অনুষ্ঠানের স্থান বদল হয়েছে। অনুষ্ঠানটি হবে রাজারহাটে আইআইটির রিসার্চ পার্ক ফাউন্ডেশনে। প্রতিবাদীদের এড়াতেই স্থান বদল? জয় বলেন, “কারা কী বলছে, কী করছে, সেই বিষয়ে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই। আগে সায়েন্স সিটিতে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও পরে স্থান বদল হয়েছে।”