প্রতীকী ছবি।
কয়েক দিন আগেই রেবতী রাউত নামে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের এক পার্শ্ব শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তার এক সপ্তাহের মধ্যে মারা গেলেন অন্য এক পার্শ্ব শিক্ষক এবং তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয়ে গেল নতুন বিতর্ক।
মালদহের লতাশি এলাকার বাসিন্দা, পার্শ্ব শিক্ষক আব্দুল মাজিদ (৫১) মারা যান মঙ্গলবার রাতে। বুধবার রটে যায়, পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনে তিনি কিছু ক্ষণের জন্য যোগ দিয়েছিলেন। পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ জানান, মাজিদ এক দিন অবস্থান-মঞ্চে এসেছিলেন। বাড়ির লোকজন অবশ্য জানান, ক্যানসারে আক্রান্ত মাজিদ তিন মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়নি তাঁর।
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পার্শ্ব শিক্ষকদের অনশন বুধবার ১৪ দিনে পড়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় মৃত্যু ঘটল। আমি এবং বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ওই শিক্ষকদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা নির্বিকার।’’ সুজনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘১৪ দিনের মধ্যে অনশনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করার সময় হল না এক দিনও মুখ্যমন্ত্রীর? ভগীরথবাবু বলেন, ‘‘যে-রাজ্যে মদ্যপান করে মারা গেলে দু’লক্ষ টাকা পাওয়া যায়, সেখানে শিক্ষকেরা মারা গেলে শিক্ষামন্ত্রীর তাকানোর সময় নেই!’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ছাত্রছাত্রীদের থেকে নিরীহ পার্শ্ব শিক্ষকদের দূরে সরিয়ে রেখে ছাত্রসমাজের ক্ষতি করা বা শিক্ষকদের শারীরিক ক্ষতি করার কোনও মানসিকতা রাজ্য সরকারের নেই। সরকার চায়, ওই শিক্ষকেরা দ্রুত কাজে ফিরে আসুন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘যদি পার্শ্ব শিক্ষকেরা মনে করে থাকেন যে, তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন, তা হলে কাগজপত্র নিয়ে আমাদের দফতরে এসে দেখা করুন। আমরা কথা বলব।’’ শিক্ষামন্ত্রী জানান, সরকার পার্শ্ব শিক্ষকদের) প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই ২০১৮ সালে তাঁদের ভাতা বাড়ানো হয়েছে। তাঁদের ইপিএফের আওতায় আনা হয়েছে। অন্য অনেক সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন তাঁরা। ‘‘এর পরেও তাঁরা অনশনে বসছেন কেন,’’ প্রশ্ন পার্থবাবুর
পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্টজন। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন অনশন-মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে আপনাদের দাবির বিষয়ে কথা বলব।’’
মাজিদ ২০০৬ সালে কড়িয়ালি সার্কেলের বোড়ল প্রাথমিক স্কুলে যোগ দেন। তাঁর ভাইপো, মুর্শিদাবাদের নিমতিতা জিডি ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক সফিকুল ইসলাম জানান, তিন মাস আগে মাজিদের লিভারে ক্যানসার ধরা পড়ে। মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আর্থিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁকে সরিয়ে আনা হয় হাওড়ার আন্দুলের একটি হাসপাতালে। পরে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। পরিবার জানায়, মঙ্গলবার সেখানকার ডাক্তার কার্যত জবাব দিয়ে মাজিদকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। অ্যাম্বুল্যান্সে হরিশ্চন্দ্রপুর রওনা হওয়ার পরে সন্ধ্যায় পথেই মারা যান তিনি। বেতন বৃদ্ধি-সহ পার্শ্ব শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন মাজিদ। আগে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এ বার আন্দোলনের কথা শুনলেও সেখানে যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না তাঁর।
ঐক্য মঞ্চের মালদহের নেতা তমাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁকে আগে বিভিন্ন আন্দোলনে দেখেছি! তবে কলকাতায় মঞ্চে যোগ দিয়েছিলেন কি না, জানি না। সামান্য আয়ে সংসার চালানোই দায়। ক্যানসারের চিকিৎসা করানোর অর্থ পাবেন কোথায়!’’ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কড়িয়ালি চক্রের সম্পাদক আরজাউল হকের দাবি, ‘‘ওঁর ক্যানসার হয়েছিল। মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। তবে আন্দোলন মঞ্চে যোগ দিয়ে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন বলে যে-দাবি করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’’
পার্শ্ব শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান, স্নাতক শিক্ষকদের টিজিটি স্কেল এবং স্কুলশিক্ষকদের বদলি চালু করার দাবি নিয়ে এ দিনই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি। সংগঠনের তরফে স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘মন্ত্রী আমাদের দাবিগুলি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।’’