কলাভবনে বিকৃত সুরে ‘সে দিন দুজনে...’, বিতর্ক

রবীন্দ্র সঙ্গীতকে বিকৃত করে গাওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই সরব রাজ্যের শিল্পী এবং সংস্কৃতিমনস্কদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থও হয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২১
Share:

বিশ্বভারতী।—ফাইল চিত্র।

বিশ্বভারতীর কলাভবনে চলছে নন্দন মেলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সেই কলাভবনে রবিবার সন্ধ্যায় দফায় দফায় বিকৃত সুরে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে দেখা গিয়েছে একদল তরুণ-তরুণীকে। রবীন্দ্রনাথের ‘সেদিন দুজনে...’ গানের কথার মাঝে ঢোকানো হয়েছে বিশ্বভারতীর ফি বৃদ্ধি-সহ ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বক্তব্য। কলা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বা থালা বাজিয়েও এই গান গাওয়ার দৃশ্য একাধিক ভিডিয়োয় উঠে এসেছে।

Advertisement

রবীন্দ্র সঙ্গীতকে বিকৃত করে গাওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই সরব রাজ্যের শিল্পী এবং সংস্কৃতিমনস্কদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থও হয়েছেন তাঁরা। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও কম হইচই হয়নি। তার মধ্যেই কলাভবন চত্বরে এ ভাবে বিকৃত সুরে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়ার ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায় নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাবে গান গাওয়ার সমালোচনায় সরব হয়েছেন নেটিজেনরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় আছড়ে পড়েছে প্রতিবাদ।

বিশ্বভারতীর আঙিনায় রবীন্দ্রনাথের গানকেই বিকৃত করে গাওয়া আসলে কবিকেই অসম্মান করা এবং অপসংস্কৃতির চডূ়ান্ত নিদর্শন বলে মনে করেন বিশ্বভারতীর অধিকাংশ কর্মী, অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, আশ্রমিক এবং প্রাক্তনীরা। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘‘এ সব রুচিহীনতার পরিচয়। আশ্রম শুধু নয়, রবীন্দ্রনাথের গান কোথাওই এমন ভাবে বিকৃত করে গাওয়া কাম্য নয়।’’ আর এক আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদারের কথায়, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের আরও সচেতন হওয়া দরকার ছিল। রবীন্দ্রনাথের তৈরি একটা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়।’’ প্রাক্তনী ও অধ্যাপকদের একাংশ বলছেন, ‘‘এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এটা অত্যন্ত লজ্জার।’’

Advertisement

কলাভবনের মধ্যে রবিবার সন্ধ্যায় তিনবার বিকৃত সুরে গানটি গোল করে ঘুরে ঘুরে কখনও লাইন করে গাইতে দেখা গিয়েছে। সোমবার কলাভবনের অধ্যক্ষ সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমার এখনও জানা নেই এই বিষয়ে। তবে খোঁজ নিতে শুরু করেছি।’’ বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের বক্তব্য, ‘‘এই নিয়ে কোনও অভিযোগও এখনও আমরা পাইনি। অভিযোগ জমা পড়লে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’

ঠিক এক বছর আগেই শিক্ষক দিবসের এক সপ্তাহ পরে সঙ্গীতভবনের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। তাতে দেখা গিয়েছিল, ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলছেন ভবনের শিক্ষক, পড়ুয়ারা। পিছনে বাজছে চটুল হিন্দি গান। সে নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। যদিও কলাভবনের রবিবারের ঘটনায় সঙ্গীত ভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের গানে যে সুর, যে কথা মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে সেটি যদি কোনও কারণে বিকৃত হয়ে থাকে, মানুষই তা বর্জন করবে।’’

রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী জয়তী চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘লজ্জাজনক, ধিক্কারজনক, দুঃখজনক তো বটেই, যারা এটা করছে, তারা হয়তো না বুঝেই করছে। বাস্তব হল, এই প্রজন্মের অধিকাংশই রবীন্দ্র সঙ্গীত যথেষ্ট পছন্দ করেন। ফলে, এমন ঘটনা আমাদের উপেক্ষা করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement