(বাঁ দিকে) নামফলক-সহ সতীশচন্দ্র সামন্তের মূর্তি। (ডান দিকে) ঢেকে দেওয়া হয়েছে সেই নামফলক। —নিজস্ব চিত্র।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রে মেদিনীপুরের ঐতিহ্য বরাবর স্মরণ করেন তৃণমূল, বিজেপি সব দলই। তৃণমূলের ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিতে সেই স্বাধীনতা যোদ্ধাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অনুষ্ঠানে অবশ্য লাগল বিতর্কের দাগ। ‘রাজনীতি’তে ঢাকা পড়ল স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশচন্দ্র সামন্ত, সুশীল ধাড়ার নামই।
শুক্রবারও দিনভর নন্দীগ্রামের জেলাতেই জনসংযোগ ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিকেলে নন্দকুমারে পদযাত্রা সেরে তিনি পৌঁছন মহিষাদলে। সেখানে ‘প্রজ্ঞানন্দ ভবনে’ স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশচন্দ্র সামন্ত, সুশীল ধাড়ার মূর্তিতে মালা দেন অভিষেক। প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। তবে ওই কর্মসূচি শুরুর আগেই সতীশচন্দ্র সামন্ত ও সুশীল ধাড়ার মূর্তির নামফলক থার্মোকল ও ফুল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। তিলক পাল্টা বলছেন, ‘‘সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ফুলের কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল। তারা কী ভাবে কী করেছে, তারাইবলতে পারবে।’’
কিন্তু কেন? জানা যাচ্ছে, পূর্ণাবয়ব মূর্তি দু’টি ২০১১ সালে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ তথা বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফলে, ফলকে শুভেন্দুর নামও ছিল। সেই নাম ঢাকতে গিয়েই পুরো নাম ফলক ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। আর তাতে ঢাকা পড়ে যায় স্বাধীনতা যোদ্ধাদের নামটাই। মূর্তির নীচে লেখা আছে, ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের রূপকার, কিংবদন্তি বিপ্লবী’। সেই লেখাও ঢাকা পড়ে যায়। এই মূর্তিগুলি বসিয়েছিল ‘বিপ্লবী সুশীল কুমার ধাড়া জন্ম শতবর্ষ কমিটি।’ আর তা দেখভাল করে ‘প্রজ্ঞানন্দ স্মৃতি রক্ষা কমিটি’। সেই কমিটির কোষাধ্যক্ষ সন্তোষ গোস্বামী এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এটা মারাত্মক অপসংস্কৃতি। এই ভাবে নাম ফলক ঢেকে দেওয়া কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘কমিটির সভাপতি, এখানকার বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এটা করেছেন।’’ তিলক পাল্টা বলছেন, ‘‘সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ফুলের কাজ করতে দেওয়া হয়। কী ভাবে কী করেছে, তারাই বলতে পারবে।’’
বৃহস্পতিবার রাতে অভিষেক ছিলেন নন্দীগ্রামে। বাসস্ট্যান্ডের ‘শহিদ মঞ্চে’ জমি আন্দোলনে নিহতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি, পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তার পর স্থানীয় বিজেপি বিধায়ককে নিশানা করে বলেন, ‘‘আমি তো বলছি শুভেন্দু অধিকারী চোর, ঘুষখোর, বেইমান। এখন তো রাত সাড়ে ১০টা, গদ্দার অধিকারীর ক্ষমতা রয়েছে এত রাতে বৈঠক করার?’’ অন্য দিকে, শুক্রবার নদিয়ায় শুভেন্দুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমাকে নাকি তিনি এক মাসের মধ্যে জেলে ঢোকাবেন। আপনি জন্মগ্রহণ করেননি সেই দিন থেকে আমি রাজনীতি করি। নাক টিপলে দুধ বার হবে। হালি নেতা! আপনার পিসিকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলাম। তাই আপনি তিন হাজার পুলিশ নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন। আপনার দিদি দিদিমা হত, মুখ্যমন্ত্রী হত না যদি শুভেন্দু অধিকারী আর নন্দীগ্রাম না থাকত।’’