ক্যালেন্ডারের প্রথম পাতা।
নতুন ইংরেজি বছরের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে বিতর্কের মুখে পড়ল খড়্গপুর আইআইটি। ক’দিন আগে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভার্চুয়াল কর্মশালায় গীতাপাঠ নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। এ বার প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠান আইআইটি-র ক্যালেন্ডারে পুরাণ-কথা ঠাঁই পাওয়ায় উঠেছে প্রশ্ন।
খড়্গপুর আইআইটির ‘সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমে’র পক্ষ থেকে তৈরি করা এই ক্যালেন্ডারের শিরোনাম ‘রিকভারি অফ দ্য ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’। ১২টি পাতায় সিন্ধু সভ্যতা, চক্রাকার সময়, স্থান-সময়-কারণ, অরৈখিক প্রবাহ পরিবর্তন, আর্য ঋষিগণ, মহাজাগতিক আলো ও সময়ের যুগ, শব্দার্থবিদ্যা ও প্রেক্ষাপট এবং বিশ্বযুদ্ধের মতো বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ছবিতে উঠে এসেছেন অরবিন্দ থেকে বিবেকানন্দ।
প্রযুক্তিবিদ্যার এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই বিষয়গুলির কী যোগ, প্রশ্ন সেখানে। সোমবার খড়্গপুর আইআইটির সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে ‘সারা ভারত শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখা। তাদের দাবি, এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের উদ্দেশ্যমূলক হিন্দুত্ববাদী কল্পনাপ্রসূত বিষয়ের যোগ রয়েছে। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণ নস্কর বলেন, “ক্যালেন্ডারে যে ভাবে ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমে’র নাম করে নানা পৌরাণিক ও অনৈতিহাসিক বিষয়কে বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নামে তুলে ধরা হচ্ছে, তা এদেশে বিজ্ঞান-শিক্ষার একটি কলঙ্কময় অধ্যায় হবে।”
ঐতিহ্যের সঙ্গে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ‘সন্ধি’ প্রকল্প চলে এই প্রতিষ্ঠানে। এই কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ভারতের রক্ষণশীল জ্ঞান ব্যবস্থার উপর ২০২১ সালের ক্যালেন্ডারও তৈরি হয়েছিল। ২০২২ সালের ক্যালেন্ডার নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা, নতুন যুগের বিজ্ঞানে যা পরিবেশের জীবনচক্র ও সবুজ ভোগবাদ, তা প্রাচীন ভারতের দান। আর্নল্ড টয়েনবি থেকে এ এল গোর এই কথা বলেছেন। নব্য অর্থশাস্ত্রের যে কল্যাণময় দিক, তাও ভারতেরই ভাবনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে অমর্ত্য সেনের ব্যাখ্যা এটাই।
আইআইটির ‘সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমে’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক জয় সেন বলেন, “ক্যালেন্ডারে কোনও বিতর্কিত বিষয় নেই। বরং আর্য আক্রমণের মিথ নিয়ে যে ভুল ও ভ্রান্তি ভারতের ইতিহাসের রূপরেখাকে বিভ্রান্ত ও কলুষিত করেছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে। ক্যালেন্ডারের ১২টি পাতায় বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টান্ত দিয়ে ১২টি প্রমাণও দেওয়া হয়েছে।”