এ বার বান্দোয়ানে

মুকুলের শুভেচ্ছায় শোরগোল

মুকুলের তৃণমূল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর্বে পুরুলিয়া শহরে তাঁর শুভেচ্ছা দেওয়া ফ্লেক্স পড়ে। সৌজন্য হিসেবে তিন জনের নাম ছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে শনাক্ত করা গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে যে দিন ফ্লেক্স পড়ে, সেই রাতেই ওই দু’জনকে একটি পুরনো প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৫
Share:

বিতর্ক: চিলা গ্রামের মোড়ে ফ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল নেত্রীর সর্তক করে দেওয়ার পরেই বান্দোয়ানে মুকুল রায়ের ছবি দেওয়া শুভেচ্ছা-বার্তার ফ্লেক্স পড়ল। শনিবার সকালে বান্দোয়ানের চিলা গ্রামের মোড়ে ওই ফ্লেক্স নজরে আসে। কয়েক মাস ধরে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ বান্দোয়ানে দলের প্রাক্তন ওই শীর্ষ নেতার ফ্লেক্স পড়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

Advertisement

মুকুলের তৃণমূল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর্বে পুরুলিয়া শহরে তাঁর শুভেচ্ছা দেওয়া ফ্লেক্স পড়ে। সৌজন্য হিসেবে তিন জনের নাম ছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে শনাক্ত করা গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে যে দিন ফ্লেক্স পড়ে, সেই রাতেই ওই দু’জনকে একটি পুরনো প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এইরকমের ফ্লেক্স পড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে কোথাও আর সৌজন্য জানিয়ে কারও নাম থাকছে না, উল্লেখ করা হচ্ছে ‘নাগরিকবৃন্দ’।

মুকুল-বিদায়ের পরে দলের ফাটল রোখার বার্তা দিতে গিয়ে বুধবারই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নজরুল মঞ্চের সাড়ে তিন হাজার নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করেন। মুকুলের সঙ্গে কারা য়োগাযোগ রাখছেন, তা যে নেত্রীর নজরে রয়েছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘আমরা হাজারটা চোখ রয়েছে। বান্দোয়ানে বা খাতড়ায় কী হচ্ছে, সব নজরে রয়েছে।’’

Advertisement

শুক্রবার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রঘুনাথ মাঝি, বিধায়ক রাজীব সোরেন চিলা গ্রামের অদুরে সুপুডি অঞ্চলে সভা করেন। তার ঠিক পরের দিন শনিবার সকালে বান্দোয়ান –মানবাজার রাস্তায়, বান্দোয়ানের চিলা গ্রামের মোড়ে একটি মনোহারি দোকানের খুঁটিতে ফ্লেক্সটি টাঙানো রয়েছে দেখা যায়। লেখা ছিল ‘শুভ দীপাবলি ও ছট পুজোর প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিন্দন’। তার পর থেকেই লোকজন ভিড় করেন ফ্লেক্সটি দেখতে। ওই মনোহারি দোকানের মালিক নৃপেন দে বলেন, ‘‘কে কখন ওটা টাঙিয়েছে জানি না। এ দিন সকালে প্রথমে দোকানে আসা কয়েকজন ক্রেতার নজরে আসে। সম্ভবত শুক্রবার রাতে এই ফ্লেক্স কেউ টাঙিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।’’

বস্তুত, গত কয়েক মাস ধরে বান্দোয়ানে তৃণমূল নেতা থেকে কর্মীরা প্রায় আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে। দলের ব্লক সভাপতি রঘুনাথ মাঝি এবং অপর পক্ষে কলেন্দ্রনাথ মান্ডি, বীরেন্দ্রনাথ মাহাতোদের কোন্দল বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। কলেন্দ্রনাথবাবুরা আলাদা ব্লক কমিটির কার্যালয় গড়ে সেখানে ওঠাবসা করেন। দু’পক্ষের আকচাআকচি সামাল দিতে তাঁদের নিয়ে জেলা নেতৃত্ব বসলেও দ্বন্দ্বের ছবিটা বিশেষ বদলায়নি।

তারই মধ্যে ২৫ অক্টোবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় বৈঠকে দলীয় কর্মীদের সতর্ক করে দেন। পুরানো কর্মীদের মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি তলায় তলায় যারা মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, তাদের রাস্তা দেখার ইঙ্গিত দেন। ওই বৈঠকেই নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিতে তার শক্তপোক্ত নেটওয়ার্কের কথা কর্মীদের মনে করিয়ে দিতে নেত্রী সে দিন বলেছিলেন, ‘‘বান্দোয়ানে বা খাতড়ায় কী হচ্ছে, আমার কাছে সে খবরও রয়েছে।’’

ঘটনাচক্রে সেই হুঁশিয়ারির তিন দিনের মধ্যেই এ দিন বান্দোয়ানে মুকুল রায়ের ফ্লেক্স পড়ায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার চিলা গ্রামের অদুরে সুপুডি অঞ্চলে ব্লক সভাপতির সভার পরের দিনই ওই ফ্লেক্স পড়ায় বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁদের তরফে বীরেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘শুক্রবার দলের ব্লক সভাপতি, বিধায়ক সুপুডি অঞ্চলে সভা করার পরেই কেন মুকুল রায়ের ফ্লেক্স পড়ল? এ কীসের ইঙ্গিত বহন করছে?
ওঁরাই বলুন।’’

আবার ব্লক সভাপতি রঘুনাথ মাঝি অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের দলীয় ভাব মূর্তি নষ্ট করতে অন্য কেউ এই কাজ করতে পারে। কারা ওখানে এই ফ্লেক্স টাঙ্গিয়েছে, দলীয় ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

এলাকার রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল লোকজনের মতে, তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ক্ষোভকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য মুকুল অনুগামীরা ওই ফ্লেক্স টাঙিয়ে জল মাপার কাজ শুরু করতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement