CESC

সিইএসসি-র ব্যাখ্যায় ক্ষোভ

২০,০০০ টাকা বিল পেয়ে তোপ দেগেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০৫:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাগে ফুঁসছে কলকাতা। ঠিক যে ভাবে ফুঁসে উঠেছিল ঘূর্ণিঝড় আমপানের পরে, দীর্ঘদিন আলো-জল না-পেয়ে। সিইএসসি-র পাঠানো অস্বাভাবিক চড়া বিদ্যুতের বিলে যে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে, তা স্পষ্ট বহু মানুষের রাস্তায় নামার হুমকিতে। কিছু অঞ্চলে বিক্ষোভ হয়েছে বলেও খবর। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারে ছয়লাপ। রাজ্যের নির্দেশে সিইএসসি তড়িঘড়ি সংবাদপত্রে বিল নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটা দেখে খোদ বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। গ্রাহকের বিল এত চড়া হল কেন, সেই হিসেবের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। দেয়নি ওরা।’’ আর ক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্রাহকদের প্রশ্ন, বরাবর যত টাকার বিল হয়, এ বার তার অঙ্ক পাঁচ-ছ’গুণ হওয়ার যুক্তি কোথায়? এটা কি তা হলে লকডাউনে হারানো ব্যবসা উসুলের জন্য সাধারণ মানুষকে লুটের ফন্দি?

Advertisement

রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অ্যাবেকার সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ চৌধুরী জানান, কাল, সোমবার তাঁরা সিইএসসি-র সদর দফতর ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন। সোমবার সংস্থাকে নোটিস পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডেও। আর শোভনদেববাবুর দাবি, ‘‘এর সমাধান করেই ছাড়ব।’’

তবে কোন রাস্তায় সেই সমাধান আসবে, তা নিয়ে ধন্দ বিস্তর। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, গলদ হিসেবের প্রক্রিয়াতেই। একসঙ্গে তিন মাসের বিদ্যুৎ খরচের ইউনিট ধরা হচ্ছে। ফলে তার পরিমাণ বেড়েছে। আর তাতেই সর্বোচ্চ দামের স্ল্যাবে হিসেব হচ্ছে মাসুল। তাদের দাবি, লকডাউনে মিটার রিডিং করা যায়নি, সেটা গ্রাহকের দোষ নয়। তা হলে সেই দায় তাঁরা নেবেন কেন? বিশেষত করোনার ধাক্কায় সব থেকে বেশি যেখানে ভুগছেন সাধারণ মানুষই। সিইএসসি-র বিল এতটাই ভয় ধরিয়েছে যে, বিল কম আসা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। তাঁদের উদ্বেগ, পরের মাসে এই কম টাকা উসুলের লম্বা বিল ধরানো হবে না তো!

Advertisement

২০,০০০ টাকা বিল পেয়ে তোপ দেগেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘‘সাধারণ জীবনযাপন করি। বিশেষত এ রকম অনিশ্চিত সময়ে খরচ সামলে চলছি। তা-ও এমন বিল! বিকল্প নেই। অসহায়! আগের বিল ছিল ১৬ হাজার।’’ যাঁদের শ’খানেক বিল আসে বরাবর, তাঁদের অনেকেরই এ বার ৮-১০ হাজার এসেছে। হাতিবাগানের এক গ্রাহকের অভিযোগ, সাধারণত মাসে ১২০০ টাকা মতো দিতে হয় তাঁকে। এ মাসে বিল পেয়েছেন ৫৭,০০০ টাকার। দমদমের অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মীর অভিযোগ, গড় বিল যেখানে ১০০০ টাকা হয়, সেখানে এসেছে ৬০০০ টাকার বেশি।

আরও পড়ুন: এক দিনে আক্রান্ত ২১৯৮, উদ্বেগের কিছু নেই: মুখ্যসচিব

সিইএসসির অবশ্য দাবি, হিসেবে ভুল নেই। সংস্থার এমডি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এক ভিডিয়োবার্তায় জানিয়েছেন, গ্রাহকেরা এখন বিলের ৫০% দিয়ে, পরের দু’মাসে ২৫% করে দিতে পারবেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষও বলেন, গ্রাহকদের প্রতি তাঁরা দায়বদ্ধ। সব স্ল্যাবের সুবিধা দিয়েই বিল হচ্ছে।

তবে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিল নিয়েই যেখানে বিভ্রান্তি, সেখানে কী ভাবে মেটাতে হবে জেনে লাভ নেই। সাধনবাবুর তোপ, ‘‘রাজ্যে সিইএসসি একতরফা ব্যবসা করছে। এটা চলতে পারে না।’’ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘‘একেই চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে আছেন সকলে। তার উপরে এমন অন্যায় বিলের বোঝা। এটা ফেরাতে হবে।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ভুতুড়ে বিল আসছে। মানুষকে লুট করতে দেওয়া যাবে না। আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হবে সরকার ও সিইএসসি-কে।’’

সিইএসসি-র যুক্তি, লকডাউনের সময়ে তৈরি প্রভিশনাল বিল অনেক কম ছিল। ফলে অধিকাংশ গ্রাহকেরই বিদ্যুৎ খরচের কিছুটা অনাদায়ী থেকে যায়। মিটার রিডিং নিয়ে মোট বিদ্যুৎ খরচের সঙ্গে এ বার তা যোগ হয়েছে। মোট ইউনিট লকডাউনের মাসগুলি দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। ফলে অঙ্কের হিসেবে প্রতি মাসে ইউনিট খরচ বেরিয়েছে। এর পর বিভিন্ন মাসুলের যে স্ল্যাব হয় (যেমন, ০-২৫ ইউনিট পর্যন্ত মাসুল প্রতি ইউনিট ৪.৮৯ টাকা), সেই দাম ধরেই-ধরেই প্রতি মাসের হিসেব করে চূড়ান্ত বিল তৈরি হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে প্রভিশনাল বিলের দাম মেটানো ইউনিট।

যদিও গ্রাহকেরা বলছেন, এ সব হিসেব তো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সহজ করে বোঝানোর কোনও প্রক্রিয়া নেই? নাকি সেটা সিইএসসি নিজেই জানে না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement