'নিগৃহীত' প্রার্থী রবি সাহার সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিধান ভবনে। নিজস্ব চিত্র।
জালিয়াতি ও গা-জোয়ারির বিস্তর অভিযোগ সত্ত্বেও কলকাতায় তাদের ফলকে ‘ইতিবাচক’ মনে করছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, রাজ্যের অন্যত্র বাকি পুরভোট হোক বিচারবিভাগীয় তত্ত্বাবধানে। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার, নাকি স্থানীয় পুলিশ দিয়েই নির্বাচন করানো সম্ভব, সেই সিদ্ধান্ত নিক বিচার বিভাগই। রাজ্য নির্বাচন কমিশনে তাদের যে বিন্দুমাত্র আস্থা নেই, সে কথা ফের জানিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস।
কলকাতায় পুরভোটে যাঁরা দলের প্রার্থী ছিলেন, বিধান ভবনে বৃহস্পতিবার তাঁদের বৈঠকে ডেকেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেসের দুই জয়ী কাউন্সিলরের মধ্যে ওয়াসিম আনসারি বৈঠকে থাকলেও সন্তোষ পাঠক সেখানে ছিলেন না। দেখা যায়নি সদ্যপরাজিত কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়কেও। সীমিত শক্তি নিয়ে শাসক দলের বাহিনী ও প্রশাসনিক শক্তির বিরুদ্ধে তাঁরা যে ভাবে লড়াই করেছেন, তার জন্য প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ভোটে হার বা জিত যা-ই হোক, নিজেদের এলাকায় দলের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রার্থীদের।
বৈঠকের পরে অধীরবাবু বলেন, কংগ্রেস কলকাতায় দু’টি ওয়ার্ড জেতার পাশাপাশি ৬টি ওয়ার্ডে ২৫%-এর বেশি ভোট পেয়েছে। দ্বিতীয় হয়েছে ১৬টি ওয়ার্ডে। কলকাতার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রেও দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা। আট মাস আগের বিধানসভা ভোটের তুলনায় দেখলে এই ফল যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই অধীরবাবুর মত। কলকাতা হাই কোর্টে এ দিনই রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২২ জানুয়ারি বাকি পুর-নিগম এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি পুরসভাগুলির ভোট হতে পারে। কলকাতার ভোটের পরে ওই নির্বাচনে তাঁরা কী করবেন, এই প্রশ্নে অধীরবাবু বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, হয় ভোট বয়কট করতে হয়, নয়তো লড়তে হয়। কোথায় কী হবে, স্থানীয় নেতৃত্বের মতামতের উপরে নির্ভর করবে। তবে আমরা লড়তেই চাই।’’ কলকাতায় না হলেও অন্যত্র জোট হবে কি না, সেই বল সিপিএমের কোর্টেই ঠেলে দিয়েছেন অধীরবাবু।
প্রদেশ সভাপতির সংযোজন, ‘‘আদালতে যেতে হতেই পারে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৃণমূলেরই একটি শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করছে! কেন্দ্রীয় বাহিনীই চাই, বিজেপির মতো দাবি আমরা করছি না। আমাদের দাবি, মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা হোক বিচারবিভাগের তত্ত্বাবধানে। তার জন্য কী করণীয়, তারা ঠিক করুক।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীরা এত দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে কলকাতা থেকে দিল্লি ছোটাছুটি করেছে। প্রত্যাখানের পরে তাতেও আস্থা হারিয়েছে। বুঝতে পারছে না, ওদের উপরে মানুষ আস্থা হারিয়েছেন। নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে মানুষের পাশে থাকুক।’’
উত্তর কলকাতার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী রবি সাহা এ দিনের বৈঠকে ছিলেন। তাঁকে ভোটের পরে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগের বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থে হয়েছে কংগ্রেস। হাই কোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট এবং আপাতত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রবিবাবুর সুরক্ষার বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে। প্রার্থী রবিবাবু, তাঁর কন্যা এবং আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচীকে পাশে নিয়ে অধীরবাবু বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লঘু ধারা দেওয়ায় পুলিশকে ভর্ৎসনাও করেছে আদালত। আমরা রবির লড়াইয়ের সঙ্গে আছি।’’ আর রবিবাবুর অভিযোগ, ‘‘থানায় তিন জনের নাম করে অভিযোগ করা সত্ত্বেও তারা বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমাকে দেখলেই গালাগালি করছে।’’