রাহুল গান্ধী। —ফাইল ছবি।
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পরে কড়া সমালোচনা করে এক্স হ্যান্ড্লে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল গান্ধী। যার উত্তরে কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যে বর্তমান ও অতীতের নানা ঘটনার দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। আর জি কর-কাণ্ডের সূত্রে ন্যায়-বিচারের দাবিতে বঙ্গে নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বর ক্রমেই জোরালো হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এ বার রাহুলের বার্তা, বিচারের দাবিতে এবং ঘৃণা ও হিংসাবর্জিত সমাজের আকাঙ্ক্ষায় সাধারণ মানুষ যে আন্দোলন চালাচ্ছেন, দল হিসেবে কংগ্রেস তার পাশেই থাকবে। রাজ্যেও কংগ্রেসকে সেই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
প্রদেশ কংগ্রেসে নেতৃত্ব বদল হয়েছে এক মাসের কিছু বেশি সময় আগে। তার পরে রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুলকে একটি ‘নোট’ পাঠিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। সেখানে তিনি আর জি করের ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি এবং নাগরিক সমাজের জোরদার প্রতিবাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। রাহুলের কাছে বর্ষীয়ান নেতার প্রস্তাব ছিল, বাংলায় আন্দোলনের পথে থেকে কংগ্রেসের জমি শক্ত করার মতো অনুকূল পরিস্থিতি আছে। এআইসিসি-র দু-তিন জন ‘সিনিয়র’ নেতাকে এ রাজ্যে পাঠানো হোক। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসে যাঁরা ভবিষ্যতের রণকৌশলের দিশা নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারবেন। প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপের পাঠানো সেই ‘নোটে’র প্রাপ্তি স্বীকার করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাহুল। পাশাপাশিই তিনি লিখেছেন, ‘জনতার স্বরকে আরও বলীয়ান করার লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী। কংগ্রেস সব সময়েই মানুষের তোলা বিচারের দাবিকে সমর্থন করেছে এবং সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে ঘৃণা ও হিংসামুক্ত সমাজ গড়ার জন্য লড়াই করেছে। আমার বিশ্বাস, সেই লড়াই আপানারা চালিয়ে যাবেন’।
এআইসিসি থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়ে কোনও কথা অবশ্য রাহুলের বার্তায় নেই। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, সাংগঠনিক বিষয়ে পদক্ষেপ যা করার, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দফতর বা এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের তরফে হয়ে থাকে। তাই এই প্রশ্নে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
ইতিমধ্যে কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে এবং এআইসিসি-র সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক বেণুগোপালের সঙ্গে দিল্লিতে কথা হয়েছে আর এক প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীরও। সেই আলোচনার নির্যাস এবং রাহুলের বার্তায় স্পষ্ট, বাংলায় কংগ্রেসকে পথ বা কৌশল বদলের কোনও সঙ্কেত হাই কমান্ড দিচ্ছে না। যদিও রাজ্যে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস সমঝোতা না-করায় এই প্রশ্নে নানা জল্পনা ছড়িয়েছে। অধীরের কথায়, ‘‘আর জি করের ঘটনার পরে সাধারণ নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। ওই ঘটনার পরে যত দিন প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বে ছিলাম, তার মধ্যে কলকাতায় এবং বেশ কয়েকটি জেলায় গিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছি।’’
এই আবহেই কালী পুজোর দিনে পালিত হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুদিন। ইন্দিরার ‘আত্মবলিদান দিবস’ উপলক্ষে বিড়লা তারামণ্ডলের কাছে তাঁর মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। মূর্তিটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং দিল্লির ‘শক্তি স্থলে’র মতো করে জায়গাটিকে গড়ে তোলার জন্য কলকাতার মেয়রের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। সেই সঙ্গেই আবাস যোজনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে, সেই প্রসঙ্গে শুভঙ্কর বলেছেন, ‘‘মিটিং-মিছিল করে আর মানুষকে বোঝাতে হবে না যে, এই রাজ্যের সরকার জন-বিরোধী কী কী কাজ করছে! মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, বিচারক হিসেবে তাঁরা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন, তা হলে অন্যায় হতেই থাকবে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, মানুষকেই রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়তে হবে।’’