বৃহস্পতিবার একুশের সমাবেশে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুষারবাবু (ডানদিকে) ও বুদ্ধবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
যাঁর সঙ্গে সেই কবেকার অহি-নকূল সম্পর্ক, আজ তাঁকেই যে ‘গিলতে’ হবে, এতটা বোধহয় ভাবতে পারেননি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
ভোটের ময়দানে যাঁর কাছে হার মানতে হয়েছে বিষ্ণুপুরের ‘শ্যামবাবু’-কে, এ বার তৃণমূলে এসে সেই তুষারকান্তি ভট্টাচার্যই বকলমে ছড়ি ঘোরাবেন না তো— শহিদ দিবসে প্রশ্নটা উঠে গিয়েছে শহরের শাসকদলের কর্মীদের মনে। তাঁদেরই একাংশের কথায়, কংগ্রেসের বিধায়ক তুষারবাবু দলে আসায় শ্যামবাবুর এখন আক্ষরিক অর্থেই শ্যাম গেল, কূলও গেল দশা।
এ বার ভোটে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হয়ে প্রাক্তন বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামবাবুকে তাঁরই গড়ে হারিয়ে বাঁকুড়া জেলায় সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেসি তুষারবাবুই। ভোটের ফল প্রকাশের পরেও জোটের কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয় ভাবে থেকেছেন। একাধিক বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগও তুলেছেন। তাঁর নিজের উপরে হামলাও হয়েছে। সেই তুষারবাবুই ক’দিন আগে হঠাৎ তৃণমূলে যাবেন ঘোষণা করে দিয়ে ফের চমকে দিয়েছিলেন সকলকে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় শহিদ স্মরণের মঞ্চে তিনি তৃণমূলে যোগও দিয়েছেন প্রত্যাশা মতো। এর ফলে বিষ্ণুপুর শহরের রাজনীতিতে শাসকদলের অন্দরের সমীকরণ যে কিছুটা হলেও পাল্টাতে চলেছে, তা মানছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই।
ঘটনা হল, বিষ্ণুপুরের রাজনীতিতে শ্যাম-তুষার বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২৬ বছর আগে এই তুষারবাবুকে সরিয়েই কংগ্রেসের পুরপ্রধান হয়েছিলেন শ্যামবাবু। পরে তৃণমূলে যোগ দেন শ্যামবাবু। তাঁর হাত ধরেই মন্দির নগরীতে তৃণমূলের বাড়বাড়ন্ত। ২০১১ সালে মন্ত্রী হওয়ার পরেও পুরপ্রধান পদটি ছাড়েননি শ্যামবাবু। এই নিয়েই উপ-পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাঁধে। এ বার ভোটে শ্যামবাবুর হয়ে প্রচারে নামতেও দেখা যায়নি তাঁকে। দলের অন্দরে অভিযোগ ওঠে, তলে তলে তুষারবাবুর হয়ে ভোটের প্রচার চালিয়ে গেছেন বুদ্ধবাবু। এর ফলে দল বিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি তাঁকে উপ-পুরপ্রধান পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, এর পরে বুদ্ধবাবু তুষারবাবুকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর জন্য জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দরবার করে গিয়েছেন। তুষারবাবুকে সামনে রেখেই শ্যামবাবুকে কোণঠাসা করতে চেয়ে অবশেষে সাফল্য পেয়েছেন বুদ্ধবাবু, তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে এমনই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে শ্যামবাবু অবশ্য বিতর্কে জড়াতে চাননি। এ দিন ফোনে বললেন, ‘‘কলকাতায় আছি। দল যা নির্দেশ দেবে মেনে চলব।’’ তুষারবাবুর আবার অভিযোগ, ‘‘বিষ্ণুপুরের উন্নয়নে শ্যামবাবু প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা দিচ্ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উন্নয়নমুখী। তাই এলাকার উন্নয়নের কথা ভেবেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, মানুষ আমাকে ভোটে জিতিয়েছে এলাকার উন্নয়নের জন্যই। এখন দল যেমন যা দায়িত্ব দেবে, মেনে চলব।’’ বুদ্ধবাবুর ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে জানিয়ে তুষারবাবুর দাবি, বুদ্ধবাবুকে বিষ্ণুপুরের উপ-পুরপ্রধান পদে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস মিলেছে। যদিও বুদ্ধবাবু বলেছেন, ‘‘তুষারবাবুকে আমাদের দলে পাওয়ায় খুশি। কিন্তু আমার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, জানি না।’’
কংগ্রেসের বাঁকুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবু চট্টোপাধ্যায় তুষারবাবুর দলবদলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘নিজের স্বার্থের জন্য দলের প্রতি উনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। দল ওঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।’’