কোচবিহারে অধীর চৌধুরী এবং রাহুল গান্ধী। — ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকালে অসম থেকে বাংলায় প্রবেশের পরে তাঁর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র দিনভর কর্মসূচির নির্ঘণ্ট। কিন্তু কোচবিহারের বক্সীরহাটে সংক্ষিপ্ত সভা এবং জেলাসদরে ‘রোড শো’ করেই ‘গুরুত্বপূর্ণ কারণে’ দিল্লি রওনা হয়ে গেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। যদিও তাঁর আচমকা দিল্লি যাত্রার কারণ সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। তবে কংগ্রেস রাজনীতির পরিচিত ধর্ম মেনে দলের ভিতরে-বাইরে এ নিয়ে প্রভূত জল্পনা শুরু হয়েছে।
কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, আবার ২৮ তারিখ অর্থাৎ আগামী রবিবার বাংলায় ফিরতে পারেন রাহুল। সে ক্ষেত্রে রাহুলের যাত্রা থেকে বাদ পড়তে পারে উত্তরবঙ্গের দুই জেলা, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের একটি অংশ।
অসমের সীমানা পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ বাংলায় পৌঁছয় রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। কোচবিহারের বক্সীরহাটে তাঁকে স্বাগত জানান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী, বাংলায় যাত্রার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা কংগ্রেসের টিমের প্রধান পূজা রায়চৌধুরী, এআইসিসি সদস্য বিশ্বজিৎ সরকার-সহ নেতানেত্রীরা। অধীরের হাতে আনুষ্ঠানিক পতাকা হস্তান্তরপর্বও হয়। বক্সীরহাটে সংক্ষিপ্ত সভার পরে তুফানগঞ্জে প্রাতরাশ করতে যাওয়ার কথা ছিল রাহুল এবং তাঁর যাত্রাসঙ্গীদের। রাতে থাকার কথা ছিল ফালাকাটায়। কিন্তু তাঁরা সরাসরি কোচবিহার শহরের উদ্দেশে রওনা হন।
বৃহস্পতিবার কোচবিহার সদর মহকুমার খাগড়াবাড়ি, মা ভবানী এলাকায় পদযাত্রা করার কথা ছিল প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির। কিন্তু সময় সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে কোচবিহার শহর এবং সন্নিহিত এলাকার রেলগুমটি, মা ভবানী, সদর বাজার, রাজবাড়ি গেট, খাগড়াবাড়ি হয়ে রাজারহাট পর্যন্ত রোড শো করেন রাহুল। খাগড়াবাড়িতে রাহুলের যাত্রাপথের অদূরে একটি তথাকথিত অরাজনৈতিক সংগঠনের লোকজন হাতে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে জমায়েত করেছিলেন। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘বাংলার জন্য দিদি একাই একশো’। যা থেকে কংগ্রেসের অনেকে মনে করছেন, ওই জমায়েতকারীরা আসলে তৃণমূলে। কারণ, এই কথাটাই দিদি তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার ঘোষণা করে দিয়েছেন।
দুপুর ২টোর কিছুক্ষণ আগেই দিল্লি যাওয়ার জন্য হাসিমারায় ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটির উদ্দেশে রওনা হন রাহুল। এআইসিসির সম্পাদক রণজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগামী রবিবার সকাল ৮টায় আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় পূর্বনির্ধারিত ক্যাম্প সাইটে আসবেন রাহুল। সেখান থেকে আবার যাত্রা শুরু করবেন তিনি।’’ প্রসঙ্গত, ফালাকাটা টাউন ক্লাবের মাঠেই বৃহস্পতিবার রাত্রিবাসের কর্মসূচি ছিল রাহুলের।
কেন রাহুল ফালাকাটায় রাত না কাটিয়ে দিল্লি ফিরে গেলেন, তা নিয়ে বিবিধ জল্পনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের একাংশের দাবি, সনিয়া গান্ধী আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাহুলকে তড়িঘড়ি দিল্লি ফিরে যেতে হয়েছে। তবে ওই কারণের কোনও সমর্থন মেলেনি। সনিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমন কোনও খবর নেই। দ্বিতীয়, তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য প্রশাসনের তরফএ বিভিন্ন ধরনের ‘অসহযোগিতা’। মঞ্চ বাঁধা বা জনসভার অনুমতি নিয়েও রাজ্য কংগ্রেসের ‘অভিযোগ’ রয়েছে। তবে সে কারণও খুব জোরালো নয়। কারণ, তা হলে রাহুল আবার বাংলায় ফিরে এসে যাত্রা শুরু করতেন না।
যে কারণটি বিভিন্ন সূত্রে শোনা যাচ্ছে, তা ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ এবং ‘যৌক্তিক’। রাহুলের ফালাকাটায় যেখানে রাত্রিবাস করার কথা ছিল, সেখানকার পরিকাঠামো ‘উপযুক্ত’ নয় বলে মনে করেছেন কংগ্রেস নেতার দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্তেরা। তা নিয়ে রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে তাঁদের একপ্রস্ত ‘আলোচনা’ও হয়েছে বলে খবর। ওই এলাকা যে রাহুলের রাত্রিবাসের পক্ষে এখনও উপযুক্ত নয়, তা তাঁরা তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে। সেই কারণেই রাহুল দিল্লি ফিরে গিয়েছেন। রবিবার রাহুল বাংলায় ফিরে ফালাকাটা থেকেই যাত্রা শুরু করবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে আর সেখানে রাত্রিবাস করতে হবে না।