তিন বছর আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্র। এ বার সেই মঞ্চেই দুই ‘প্রতিবাদের স্বর’কে উপস্থিত করাতে চান তাঁর স্বামী সোমেন মিত্র। তাঁদের এক জন রাজ্যের প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। অন্য জন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়।
কেন এ বার বিধান-স্মরণে এই দুই ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ? সোমেনবাবু শুক্রবার বলেন, ‘‘দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে এই দু’জন রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করেছেন। মানুষ ওঁদের শ্রদ্ধা করেন। তাই ওঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ ১৫ বছর ধরে সোমেনবাবুদের ‘বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’র উদ্যোগে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনের সামনে ১ জুলাই বিধানচন্দ্রে রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন করা হয়। সোমেনবাবুর দাবি, ‘‘বিধানচন্দ্র রায়ের আদর্শ সামনে রেখে আমরা অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান করে থাকি। আর সেই কারণেই মীরা পাণ্ডের মতো দক্ষ আমলা থেকে শুরু করে প্রাক্তন বিচারপতি অশোকবাবুর মতো গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য যাঁরা লড়াই করছেন, বিধানচন্দ্র সম্পর্কে তাঁদের মূল্যায়ন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আজকের দিনে দরকার বলে আমরা মনে করি।’’
তিন বছর আগে এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই সোমেন-জায়া শিখাদেবী বলেছিলেন, ‘‘বিধানবাবু সংকীর্ণ রাজনীতি কখনও করেননি। তিনি কখনও কাজ না-করতে পারার অজুহাত দেননি। মানুষ কাজ করার জন্যেই চেয়ারে (মুখ্যমন্ত্রীর পদে) বসিয়েছে। এখন তো খালি শুনছি, টাকা নেই, কাজ করতে পারছি না।’’ সে দিন ওই অনুষ্ঠানে শিখাদেবীর বক্তব্য নিয়ে দলের অন্দরে জল ঘোলা কম হয়নি।
এ বারের অনুষ্ঠানে মীরাদেবী ও অশোকবাবুকে ট্রাস্টের তরফে আমন্ত্রণ জানানোয় রাজনৈতিক শিবিরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। দু’বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে দিনক্ষণ নির্ধারণ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর বিষয়ে মীরাদেবীর সঙ্গে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সংঘাত সর্বজন বিদিত। আবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন অশোকবাবু। রাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচানোর দাবিতে এখন তিনি কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীদের সঙ্গে রীতিমতো রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছেন। তবে অনুষ্ঠানে শ্রোতা হিসাবে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা মহম্মদ সোহরাব থেকে শুরু করে দলীয় বিধায়ক, প্রদেশ কংগ্রেসের পদাধিকারীদের আমন্ত্রণ জানালেও অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের তাঁরা আমন্ত্রণ জানাননি বলে সোমেনবাবু জানিয়েছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানের মাসদেড়েকের মধ্যেই বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগেই সোমেনবাবুরা ইউনির্ভাসিটি ইন্সস্টিউট হলে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সমাপ্তি অনুষ্ঠান করবেন। অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ২৪ অগস্ট। সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সোমেনবাবু। অনুষ্ঠানে যোগদানের সম্মতি
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে তাঁরা পেয়েও গিয়েছেন। কিন্তু গোপালকৃষ্ণের যোগদানের ব্যাপারে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ওই সময়ে প্রাক্তন রাজ্যপালের অন্য কিছু জরুরি কাজ আছে। ওই অনুষ্ঠানে মুকুল রায়কেও আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন সোমেনবাবু। কিন্তু ডাকা হচ্ছে না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আমন্ত্রিতদের তালিকায় মুকুল ছাড়াও তৃণমূলের কয়েক জন নেতা রয়েছেন বলে সোমেন-ঘনিষ্ঠদের দাবি।
মমতাকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সোমেনবাবুর তির্যক মন্তব্য, ‘‘মমতা অনেক বড় নেত্রী! তাঁকে কখনও এমন ছোট অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো যায়?’