—প্রতীকী চিত্র।
উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল এআইসিসি। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে উপনির্বাচনের তিন আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। হিমাচলের দেহরা আসনে কমলেশ ঠাকুরকে প্রার্থী করার পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের দুই আসনে প্রার্থীদের নাম জানিয়েছে তারা। রায়গঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে হাত প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। আর বাগদার প্রার্থী হয়েছেন অশোক হালদার।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এই দুই নাম ঘোষণার পরে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহলে। কারণ, যে চার আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে তার তিনটিতেই প্রার্থী দিয়েছে বামফ্রন্ট। মানিকতলা ও রানাঘাট দক্ষিণ আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। বাগদা আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লককে। শুক্রবার বামফ্রন্টের বৈঠক শেষে কংগ্রেসের জন্য রায়গঞ্জ বিধানসভা আসনটি ছেড়ে রেখে বাকি তিনটি কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বামেরা। জানানো হয়েছিল, কলকাতার মানিকতলা এবং নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণে সিপিএম লড়াই করবে। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় লড়বে ফরওয়ার্ড ব্লক।
শনিবার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ১০ জুলাই রাজ্যের চারটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের মধ্যে দু’টিতে প্রার্থী দেওয়া হবে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা। মঙ্গলবার এই দুই আসনে প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দিয়েছে এআইসিসি। বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ভাল হলেও, বাম শরিক ফব-র সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। বাগদায় বামফ্রন্টের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী করা হয়েছে গৌরাদিত্য বিশ্বাসকে। তার পরেই কংগ্রেসের তরফে বাগদায় প্রার্থী হিসাবে অশোকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যাকে অনেকে পুরুলিয়া এবং কোচবিহারের ‘জবাব’ বলে মনে করছেন। অনেকের মতে, কংগ্রেসের এই ঘোষণা নতুন করে বাম-কংগ্রেস সমঝোতার ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে জল্পনা তৈরি করতে পারে।
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে সিপিএম, আরএসপি এবং সিপিআইয়ের সঙ্গে ‘সংঘাত’ না হলেও কোচবিহার এবং পুরুলিয়া আসনে কংগ্রেস-ফরওয়ার্ড ব্লকের লড়াই হয়েছিল। মেদিনীপুর আসন নিয়ে কংগ্রেস ও সিপিআইয়ের মধ্যে প্রথম দিকে মন কষাকষি চললেও পরে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল এআইসিসি। ফলে সিপিআইয়ের সঙ্গে এখন আর কোনও দ্বন্দ্ব নেই কংগ্রেস নেতৃত্বের। লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লক ৩০ হাজার এবং কংগ্রেস প্রায় ১১ হাজার ভোট পেয়েছিল। আর পুরুলিয়ায় কংগ্রেস এক লক্ষ ২৯ হাজার এবং ফরওয়ার্ড ব্লক সাড়ে ১৪ হাজার ভোট পেয়েছে। ভোটের আগে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু প্রকাশ্যে কোচবিহারে প্রার্থী প্রত্যাহারের জন্য কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস তা মানেনি। আর এ বার বাগদায় কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া নিয়ে সম্মুখসমরে কংগ্রেস-ফব।
কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার পর ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাগদা কংগ্রেসের প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসাবে বিমানদা ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন বাগদায়। সেখানে আমরা সিপিএমের সমর্থন নিয়ে লড়াই করব।’’ এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সংগঠন ইনচার্জ নিলয় প্রামাণিক বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটেও কোনও কোনও কেন্দ্রে বামফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা বাম-কংগ্রেস জোটে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই আমরা মনে করি।’’