রাজ্যের মোট ৪২টি লোকসভা আসনকে মোটামুটি তিন ভাগে ভেঙে নিয়ে রফা-আলোচনায় এগোচ্ছে কংগ্রেস ও সিপিএম। দু’দলের দুই শীর্ষ নেতা রাহুল গাঁধী ও সীতারাম ইয়েচুরির আলোচনায় প্রাথমিক ঐকমত্য হওয়ার পরে দু’পক্ষের রাজ্য নেতৃত্ব এ বার আসন ধরে ধরে হিসেব মেলাচ্ছেন। তবে রফাসূত্র মানতে গিয়েও এখনও পর্যন্ত বোঝাপড়ার পথের কাঁটা হয়ে থাকছে রায়গঞ্জ!
কংগ্রেসের চার এবং সিপিএমের দুই মিলে এখন দু’দলের হাতে আছে মোট ৬টি আসন। রফার প্রথম শর্ত, ওই ৬ আসনে দু’দলের তরফে এক জন করেই প্রার্থী থাকবেন। রাজ্যের দু’টি আসন (দার্জিলিং ও আসানসোল) রয়েছে বিজেপির দখলে। সেই দুই আসনেও কংগ্রেস-সিপিএমের তরফে অভিন্ন প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা হবে। আর এ ছাড়াও রাজ্যের যে সব লোকসভা কেন্দ্রে গত কয়েক বছরে বিজেপির ভোট উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে, সেখানেও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এক জন করেই প্রার্থী বাছাইয়ের চেষ্টা হবে। দেখা যাচ্ছে, এই সূত্র ধরে এগোলে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে প্রায় সমান সমান আসন বণ্টন সম্ভব। তবে এর মধ্যে কিছু আসনে বাম শরিকেরা বরাবর লড়াই করে। রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়কার ‘তিক্ততা’ মাথায় রেখে সিপিএমের রাজ্য নেতারা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁরা যেন সরাসরি শরিকদের সঙ্গেও আগাম আলোচনা করেন।
সিপিএমের যেমন মাথাব্যথার কারণ বাম শরিকদের একাংশের মনোভাব, তেমনই কংগ্রেসের ঘরে অস্বস্তির কেন্দ্রে এখন রায়গঞ্জ। ওই আসন থেকে এ বার ফের লোকসভায় দীপা দাশমুন্সিকে প্রার্থী করতে হবে বলে প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে দাবি পেশ করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত। কিন্তু প্রাথমিক আলোচনাতেই সিপিএম কংগ্রেসকে জানিয়ে দিয়েছে, দু’দলের হাতে থাকা ৬টি আসন বাইরে রেখেই কথা এগোতে হবে। কারণ, ওই ৬ আসনের যেটা যার হাতে আছে, সেখানে তারাই প্রার্থী দেবে— এটাই স্বাভাবিক শর্ত।
বোঝাপড়ার বল জটে আটকে যাচ্ছে দেখে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম কার্যকরী সভাপতি ও দক্ষিণ মালদহের সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) চৌধুরী প্রস্তাব দিয়েছেন, দীপাকে বরং উত্তর মালদহ থেকে প্রার্থী করা হোক। মৌসম বেনজির নূর তৃণমূলে চলে যাওয়ায় ওই আসনে কংগ্রেসকে প্রার্থী বদলাতেই হবে। দীপা ওখানে প্রার্থী হলে লাগোয়া রায়গঞ্জেও দু’দলের সমঝোতার ‘ইতিবাচক প্রভাব’ পড়বে। কিন্তু মোহিতবাবুরা আবার তেমন প্রস্তাবে রাজি নন। ঘটনাপ্রবাহ দেখে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মত, ‘‘রায়গঞ্জে বিজেপির প্রভাব অনেক বেড়েছে। আমাদের মধ্যে জেদাজেদি থাকলে আখেরে বিজেপিই লাভবান হবে।’’
পরিস্থিতি বুঝে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এ বার অধীর চৌধুরী ও দীপাকে ডেকে সরাসরি আলোচনায় বসার পরিকল্পনা নিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ আসন নিয়ে জেলা কংগ্রেসের দাবি আছে বলেই অধীরবাবুর সঙ্গে কথা বলার ভাবনা। তার আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বামেদের সঙ্গে আমরা স্বচ্ছন্দ। ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই আলোচনা শুরু করেছি।’’