অধীর চৌধুরী ও বিমান বসু। ফাইল চিত্র।
আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-সহ ছোট কিছু দলের জন্য জায়গা ছেড়ে রেখেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলার ঘোষণা করল সিপিএম ও কংগ্রেস। অন্য দলগুলির মধ্যে কাকে কোথায় আসন দেওয়া হবে, তার ফয়সালা না হওয়ায় আসন-সংখ্যার কোনও ঘোষণা বাইরে করছেন না দু’পক্ষের নেতৃত্ব।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে গিয়ে মঙ্গলবার সিপিএমের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা সেরেছেন প্রদশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। বৈঠক শেষে প্র্দেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু যৌথ ভাবেই ঘোষণা করেছেন, তাঁদের সমঝোতা চূড়ান্ত। তবে জোট শিবির সূত্রের খবর, আব্বাসের আইএসএফ বাম ও কংগ্রেসের কাছে ৪৫ থেকে ৫০টি আসনের দাবি করছে। যা মেনে নিতে অধীরবাবু, বিমানবাবুরা রাজি নন। এই দর কষাকষির জন্যই এখনও অস্পষ্ট রয়েছে জোটের চূড়ান্ত চিত্র। জট কাটাতে আজ, বুধবারই আইএসএফের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় বসার কথা সিপিএম ও কংগ্রেসের।
বিমানবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘আসন নিয়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। বাম-কংগ্রেসের মধ্যে আইএসএফ-ও এসেছে। বাম, কংগ্রেস, আইএসএফের সমঝোতায় নির্বাচন হবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মধ্যে আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়েছে। কে, কত আসনে লড়বে, এখনই বলতে চাই না। কারণ, অনেক ছোট ছোট দল জোটের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে আসতে চাইছে। জোটে শামিল হলে তাদের জন্য কিছু আসন ছাড়তে হবে। যাতে ভুল বার্তা না যায়, সে দিকে খেয়াল রেখে সমমনোভাবাপন্ন দলকে সম্মান জানানোর জন্য সংখ্যাটা এখনই বললাম না।’’ আইএসএফ-কে এমআইএম সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন অধীরবাবু। কারণ, তাঁর মতে, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ‘শর্ত’ মেনেই তাঁরা জোট করতে চান। আরজেডি, এনসিপি-র মতো দলকে এই জোটে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
অধীরবাবুর সঙ্গে এ দিনের বৈঠকে ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, দুই বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী ও নেপাল মাহাতো। সিপিএমের তরফে বিমানবাবুর পাশাপাশি ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের ভাগের ৯২টি আসনের মধ্যে ৮৮টি নিয়ে জট কেটে গিয়েছে। চারটি নিয়ে সামান্য অস্পষ্টতা আছে, যা মিটে যাওয়ার পথে। তার পরেও আরও কিছু আসনের দাবি কংগ্রেসের আছে, যা আব্বাসদের দাবির নিষ্পত্তি না হলে মীমাংসা করা মুশকিল। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পুরুলিয়ার মতো কিছু জেলায় আসন ধরে ধরে কংগ্রেসকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন বিমানবাবুরা, যাতে শরিকদের স্বার্থরক্ষা করা যায়।
বিমানবাবু বলেছেন, জোট-শিবির সর্বশক্তি দিয়েই আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ করবে। বামেরা তার প্রচারে নেমে পড়েছে আগেই। প্রদেশ কংগ্রেসও প্রতি জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানাচ্ছে, বাসে-ট্রেনে চেপে বা গাড়ি ভাড়া করে কর্মী-সমর্থকদের বিপুল সংখ্যায় সমাবেশে আসতে হবে। তবে সূত্রের খবর, ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ তামিলনাড়ুতে থাকার কথা রাহুল গাঁধীর। তেমন হলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে যাতে ব্রিগেডে আনা যায়, তার জন্য কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। অধীরবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘জোটের শক্তি বাড়ছে বলেই আক্রমণও করছে। মইদুল ইসলাম মিদ্যা তারই রূপ। বাংলায় দ্বিপাক্ষিক নয়, ত্রিপাক্ষিক লড়াই হবে। বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে ব্রিগেডে সমাবেশ করব।’’