কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের বিক্ষোভ। আগরতলায়। —নিজস্ব চিত্র।
বি আর অম্বেডকরকে ‘অসম্মানে’র অভিযোগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে নামল কংগ্রেস। সেই সঙ্গেই প্রতিবাদ হল বৃহস্পতিবার প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনে বিজেপির যুব মোর্চার ‘হামলা’র অভিযোগে। শাহ শুক্রবার সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন। পরে পৌঁছন ত্রিপুরার আগরতলায়। এই সূত্রে শিলিগুড়ি ও আগরতলা, দুই রাজ্যের দুই শহরেই শাহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস।
অম্বেডকর-মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে পথে নামার কথা জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। শাহের মন্তব্যের পরেই সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাহের বিরুদ্ধে সংসদের মর্যাদা লঙ্ঘন এবং অম্বেডকরের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে মমতা এ দিন ফের বলেছেন, ‘সংবিধান-বিরোধী বিজেপি বারংবার এই মহান দেশের গণতন্ত্রের উপরে আঘাত হানছে। তাদের দলিত-বিরোধী মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে।’ তৃণমূল নেত্রীর এই বক্তব্যের পরেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জানিয়েছেন, রাজ্যের সব ব্লকে এবং শহরের সব ওয়ার্ডে ধিক্কার মিছিল হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ দিন সশস্ত্র সীমা সুরক্ষা বলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন। পরে আগরতলায় পৌঁছন। সেখানে আজ, শনিবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর্ষদের (এনইসি) ৭২তম প্লেনারি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার কথা তাঁর। শাহের অম্বেডকর-মন্তব্যের প্রতিবাদে এ দিন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে প্রতিবাদ মিছিল করে কংগ্রেস এবং তাদের যুব, মহিলা সংগঠন। এআইসিসি-র সদস্য সুবীন ভৌমিকের বক্তব্য, “শাহের মন্তব্য নিম্নরুচির। রাহুল গান্ধীকেও তাঁরা আক্রমণ করছেন।” একই ভাবে আগরতলায় পোস্ট অফিস চৌমহনির কংগ্রেস ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ছিলেন যুব কংগ্রেস নেতা শাহজান ইসলাম-সহ অন্যেরা।
শাহের মন্তব্যের প্রতিবাদে প্রদেশ কংগ্রেসের বিক্ষোভ। কলকাতায় —নিজস্ব চিত্র।
শাহের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কলকাতাতেও প্রতিবাদে পথে নেমেছিল কংগ্রেস। অম্বেডকরকে অপমান করে সংবিধানকে হত্যা করতে চাইছে বিজেপি সরকার, এমন অভিযোগে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতীকী মরদেহ দাহ করেছে প্রদেশ কংগ্রেস! যদিও প্রতীকী মরদেহ নিয়ে এমন কর্মসূচি প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষে মানানসই কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে দলের একাংশেই। কলেজ স্কোয়ার থেকে মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত মিছিল-বিক্ষোভে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, অসিত মিত্র, মায়া ঘোষ, কৃষ্ণা দেবনাথ, অমিতাভ চক্রবর্তী-সহ দলের নেতারা। শুভঙ্করের অভিযোগ, ‘‘আদানি-কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতে গিয়ে শাহ অম্বেডকরকে নিয়ে যা বলেছেন, তাতে বিজেপি-আরএসএসের এর সংবিধান বিরোধী, দলিত বিরোধী মুখ ও মনোভাবকেই সামনে এসে গিয়েছে। তার পরে শাহকে আড়াল করার জন্য ভীত বিজেপি সংসদের মধ্যে রাজ্যসভা ও লোকসভার দুই বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং রাহুল গান্ধীকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করেছে।’’ শাহের মন্তব্য এবং বিধান ভবনে ‘হামলা’র প্রতিবাদে মিছিল হয়েছে যুব কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি আজ়হার মল্লিকের নেতৃত্বেও।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, “যাঁরা বাবাসাহেবকে মন্ত্রী হতে দেননি, যাঁদের অধিবেশনে বাবাসাহেব এবং বাবু জগজীবন রামের জন্য পৃথক বসার জায়গা ছিল, তাঁদের থেকে অম্বেডকরের অপমান নিয়ে কথা শুনতে হবে? কংগ্রেসের এই নিয়ে কোনও বক্তব্য রাখার নৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার নেই!”