পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি আগেই শুরু করেছে কমিশন। প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে ফের ধোঁয়াশা তৈরি হল প্রশাসনের অন্দরে। গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু’মাস ধরে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি ঘোষণা করে দেওয়ায় কবে ভোট হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। ঘটনাচক্রে, গত মঙ্গলবার সব জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের। আচমকাই তা বাতিল হয়ে যায়। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, ব্যক্তিগত কারণে কমিশনারকে ওই বৈঠক বাতিল করতে হয়েছিল।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি আগেই শুরু করেছে কমিশন। ২৮ এপ্রিল ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত নির্দেশিকাও প্রকাশ পাবে। সূত্রের খবর, জেলায় জেলায় ব্যালট বাক্স জোগাড়, ব্যালট-কাগজ তৈরির প্রক্রিয়াও শুরুর পথে। এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসকদের সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বৈঠক ডাকায় জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। ঘটনাচক্রে, তার পরেই দিনই তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচির ঘোষণা হয়। তবে কমিশনের এক কর্তা বলেন, “সাধারণত প্রতি মাসেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে জেলাশাসকদের সঙ্গে কমিশনারের বৈঠক হয়। আগামী মাসে তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, প্রশাসনের শীর্ষমহল আগে শীতের আমেজে ভোট করাতে চেয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। মে মাসে ভোট হওয়ার জল্পনা শুরু হয়। তবে আগামী মাসে ভোট করাতে হলে মে মাসের গোড়াতেই তার ঘোষণা হওয়া জরুরি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। ২৪ এপ্রিল থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত চলার কথা ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি। এই সময়ে যাত্রাপথে মানুষের মত জেনে পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই করার কথাও জানিয়েছেন অভিষেক। তবে কমিশন সূত্রের বক্তব্য, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মসূচি হলে অবশ্য ভোট ঘোষণায় বাধা নেই। শুধু প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত কোনও বিষয় তার সঙ্গে যুক্ত থাকা চলবে না। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার শুক্রবার বলেন, “এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনিনি। সবাই জল্পনাই করছেন। তবে হাতে সময় রয়েছে।”
দফতর সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে জেতা প্রতিনিধিদের নিয়ে বোর্ডগুলি তৈরি হয়েছিল ১৬ অগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর। কমিশনের এক কর্তা বলেন, “এই কারণে তাড়াহুড়ো নেই। সময় আছে।” সাধারণত, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্যে বর্ষা ঢোকার কথা। জুলাই অগস্টেও বৃষ্টি-বন্যার সমস্যা থাকে। তখন কি ভোট করানো সম্ভব? ওই কর্তার কথায়, “এই গরমের থেকে তো অন্তত রেহাই মিলবে!”
ভোটের তারিখ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও অব্যাহত। দিল্লিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ প্রসঙ্গে শুক্রবার বলেন, ‘‘দিদির দূত বা ভূত পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে গিয়ে আমজনতার আক্রোশের শিকার হতে হয়েছিল তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের। তাই জনসংযোগ যাত্রার নামে পঞ্চায়েত ভোট যাতে পিছিয়ে যায় সে জন্যই উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূল ভয় পেয়েছে। এই জন্যই নতুন করে বলছে জনসংযোগ করতে হবে। তার মানে জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, চ্যালেঞ্জ নাও, পঞ্চায়েতের তারিখ দাও।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা, ‘‘ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করে নির্বাচন কমিশন। দল নয়। আর যাঁরা এই প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা সব বুথে প্রার্থী খুঁজে পাবেন না। তাই এ সব বলে প্রচারে থাকতে চাইছেন।’’