ফাইল চিত্র।
জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করার খবর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরাসরি জানিয়েছিলেন বিজেপির সাংসদদের। এ বার দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদের সুপারিশে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে দার্জিলিং জেলার এক বাসিন্দার চিকিৎসার জন্য সরাসরি বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হল।
ওই ঘটনার পরেই বিজেপির তরফে প্রেস বিবৃতি জারি করে অভিযোগ করা হয়েছে, এ রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প না থাকাতে গরিব বাসিন্দারা চিকিৎসা ক্ষেত্রে অর্থ পাচ্ছেন না। বিজেপির দাবি, সেই বঞ্চনা মেটাতে বিজেপির সাংসদেরা সরাসরি উদ্যোগী হয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিষয়টি কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারেরই তালিকাভুক্ত। রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের মতে, দুই তালিকাভুক্ত বিষয়গুলি নিয়ে চাপ তৈরি করতে বিজেপি এ রাজ্যে উঠেপড়ে লেগেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিজেপি রাজনীতি করছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দের কথা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে জানানোর পাশাপাশি বিজেপির সাংসদকেও জানানো হচ্ছে।
দার্জিলিঙের নকশালবাড়ির বাসিন্দা পুলিয়া বাসফোরের হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করার কথা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। তৃণমূলের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে যে কোনও কাউকে সাহায্য করা যেতেই পারে। তবে স্বাস্থ্যের মতো যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়গুলি রাজ্যকেও জানানো প্রয়োজন।
জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের দাবি, “গত কয়েক মাস ধরে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের দাবিতে আমরা দলের সাংসদেরা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছি। আয়ুষ্মান ভারতের মতো কেন্দ্রের প্রকল্পে চিকিৎসায় বিপুল সাহায্য করা হয় সেই প্রকল্প তৃণমূল সরকার এ রাজ্যে চালাতে দিচ্ছে না।” বিজেপি সাংসদের দাবি, এ বার থেকে গরিব বাসিন্দা যাঁরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তাঁদের সাহায্যের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থ চাওয়া হবে।
দলীয় সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং দুই লোকসভাতেই বিপুল ভোটে বিজেপি জিতেছে। তবে এনআরসি এবং সিএএ-তে নাগরিক আন্দোলনের জেরে দুই জেলাতেই দল কোণঠাসা। লোকসভা ভোটের পরে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান হয়েছে। নয়া নাগরিক আইন নিয়ে আন্দোলনের পরে সেই সদস্যদের অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে কবুল করছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরে পুরভোট ও আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলকে পাল্টা চাপে ফেলতে রাজ্যকে এড়িয়েই কেন্দ্রের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দাবি।
বন্ধ চা বাগান খুলতেও রাজ্যকে এড়িয়ে চা পর্ষদ সরাসরি বাগান মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে অভিযোগ। অতীতে সার্কিট বেঞ্চের ক্ষেত্রেও রাজ্যকে এড়িয়ে একতরফা খোদ প্রধানমন্ত্রীকে সার্কিট বেঞ্চের ফলক উন্মোচন করতে দেখেছিল উত্তরবঙ্গ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, সেই পথেই পা ফেলতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর মন্তব্য, “রাজ্যের টাকা দিয়েই তো কেন্দ্র আয়ুষ্মান প্রকল্প চালাচ্ছে। তা হলে কেন কেন্দ্রের নাম ব্যবহার করা হবে। রাজ্যই সকলকে স্বাস্থ্যবিমা করিয়েছে। রাজ্যকে এড়িয়ে বিজেপি রাজনীতি করতে চাইছে। এটা কোনও গণতান্ত্রিক পথ নয়। বিজেপি যেন মানুষকে বোকা না ভাবে।”