মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতের বিষয়টিকে আমল না দিয়েই নতুন বঙ্গাব্দ শুরুর আগেই ‘বঙ্গ মৎস্য যোজনা’ শুরু করে দিতে চাইছে রাজ্য। তবে প্রকল্পটি প্রকাশ্যে এলেই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হতে পারে গেরুয়া শিবির।
‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা’ প্রকল্পটি বাংলায় ‘বঙ্গ মৎস্য যোজনা’ হিসেবে চালু করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রতীকী ছবি
মৎস্য প্রকল্প নিয়েও এ বার সঙ্ঘাতের পথে কেন্দ্র-রাজ্য। পয়লা বৈশাখের আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস্য দফতর শুরু করতে চলেছে ‘বঙ্গ মৎস্য যোজনা’। কিন্তু কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-র অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা’ প্রকল্পটি বাংলায় ‘বঙ্গ মৎস্য যোজনা’ হিসেবে চালু করা হচ্ছে। প্রকল্পের নাম বদল করে কেন্দ্রীয় সরকারের কৃতিত্ব জনমানস থেকে মুছে দিতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাই এই প্রকল্পটি নিয়ে ফের সঙ্ঘাতে জড়াতে পারে দু’পক্ষ। মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের জন্য ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। কী ভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে, উপভোক্তারা কী কী সুবিধা পাবেন ইত্যাদি বিষয়ে ইতিমধ্যেই মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ এপ্রিল সব জেলার আধিকারিকদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকও ডাকা হয়েছে।
কিন্তু বিজেপি-র অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পকে এড়িয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পকেই নিজেদের নামে চালাতে চাইছে। তবে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে অর্থের ভাগিদারি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মতো বেনিফিসারিরও রয়েছে। তাই কেন্দ্রের প্রকল্পকে রাজ্যের নাম চালানোর যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ, প্রকল্পের অনেকগুলি দিক রয়েছে। একেকটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের পরিমাণ একেক রকম। আর রাজ্যের মানুষের জন্য প্রকল্পের অধীন কোন কোন বিষয়গুলি কাজে লাগবে, তাও আলোচনা করে ঠিক করব আমরাই।’’ সঙ্গে তিনি প্রকল্প নিয়ে সঙ্ঘাতের জেরে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সঙ্গে আয়ুষ্মান প্রকল্পের তুলনাও টেনেছেন। তাঁর কথায়, যেমন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হওয়ায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হয়নি। তেমনই, ‘বঙ্গ মৎস্য যোজনা’ প্রকল্প থাকলে ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা’-র প্রয়োজনীয়তা কী?
শুধু আয়ুষ্মান ভারত বা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়েই নয়, একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য নিজের নাম বসিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের জলজীবন মিশন প্রকল্পকে রাজ্য সরকার ‘জলস্বপ্ন’ নাম দিয়ে চালানোর চেষ্টা করছে। বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি কলকাতা সফরে এসে জলশক্তি মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের নাম বদলে রাজ্যে চালানো যাবে না।’’ এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম ‘বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প’ হিসেবে চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে রাজ্য বিজেপি। সূত্রের খবর, বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের নাম বদল করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের নাম নিজেদের বলে চালানোর চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারকে সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে।’’
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতের বিষয়টিকে আমল না দিয়েই নতুন বঙ্গাব্দ শুরুর আগেই ‘বঙ্গ মৎস্য যোজনা’ শুরু করে দিতে চাইছে রাজ্য। তবে প্রকল্পটি প্রকাশ্যে এলেই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হতে পারে গেরুয়া শিবির।