প্রতীকী ছবি।
চলতি আর্থিক বছরের তিন মাস কেটে গিয়েছে। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকা আসেনি রাজ্যে। টাকা পাওয়ার জন্য নবান্নকে দু’টি শর্ত পূরণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। করোনা, লকডাউন, আমপানের জেরে সেই শর্ত পূরণ করে উঠতে পারেনি পঞ্চায়েত দফতর। কিন্তু যত ক্ষণ না শর্ত পূরণ হচ্ছে, তত ক্ষণ বরাদ্দ ছাড়তে নারাজ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। নবান্ন সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ৯ লক্ষ ২৩ হাজার কাঁচাবাড়ি পাকা করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য খরচ হবে ১১ হাজার কোটি টাকা। যার ৬০ ভাগ টাকা দেবে দিল্লি, এবং বাকি ৪০ ভাগ টাকা দেবে রাজ্য। প্রথম কিস্তিতে দিল্লি থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আসার কথা থাকলেও এখনও তা আসেনি। কেন? নবান্ন সূত্রের খবর, সমস্যা তৈরি হয়েছে উপভোক্তার সংখ্যা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে।
দিল্লির বক্তব্য, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের যত সংখ্যক বাড়ি হওয়ার কথা, তার ৬০% উপভোক্তাকে তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত হতে হবে। রাজ্য সরকার যে তালিকা পাঠিয়েছে, তার মাত্র ২৯% এই দুই শ্রেণির উপভোক্তা।
নবান্নের পাল্টা বক্তব্য, গত ছ’বছরে এ রাজ্যে প্রচুর তফসিলি জাতি-জনজাতির বাড়ি তৈরি হয়েছে। আবাস যোজনার উপভোক্তাদের যে তথ্যপঞ্জি এখন রাজ্যের কাছে রয়েছে, তাতে তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত আর মাত্র ২৯% উপভোক্তার পাকা বাড়ি তৈরি বাকি আছে। ফলে চাইলেও ৬০% উপভোক্তা দেওয়া সম্ভব নয়।
এ কথা শুনে দিল্লি রাজ্যকে জানিয়েছে, সে ক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে যে, ‘পশ্চিমঙ্গে তফসিলি জাতি-জনজাতির প্রায় সকলেরই পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই গ্রামীণ আবাস যোজনার ৬০ ভাগ বাড়ি তাঁদের জন্য বরাদ্দ করা যাচ্ছে না। তা সাধারণ উপভোক্তাদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে।’ কিন্তু প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও সেই চিঠি দিল্লি পাঠাননি মুখ্যসচিব।
নবান্নের দাবি, ২০০৬ সালে আর্থ-সামাজিক জাতি সমীক্ষার ভিত্তিতে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি হয়েছিল। ১৪ বছরে তার অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। তখন যাঁরা কাঁচাবাড়ির মালিক ছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন পাকাবাড়ির মালিক। আবার পরিবার ভাগ হওয়ার ফলে অনেক নতুন কাঁচা বাড়িও তৈরি হয়েছে। সুতরাং তালিকা সংশোধন না-হলে কোনও আধিকারিকের পক্ষে এমন ‘মুচলেকা’ দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া মুশকিল।
এক শীর্ষ কর্তার কথায়,‘‘কে দায়িত্ব নিয়ে বলবেন যে, রাজ্যের তফসিলি জাতি-জনজাতিভুক্ত সব মানুষের পাকাবাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে অন্য পথ খুঁজতে হবে। কেন্দ্রকে জবাবও দেওয়া হবে।’’
তবে শুধু উপভোক্তা বাছাই নয়, আবাস যোজনার টাকা বিলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়েও গোল বেধেছে। রাজ্যে এখনও প্রায় শতাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেখান থেকে এক সময় উপভোক্তাদের কাছে টাকা যেত। কেন্দ্র এখন সরাসরি উপভোক্তাদের টাকা পাঠায়। ফলে পুরনো অ্যাকাউন্টগুলির হিসেব দাখিল করে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়ার কথা। সেই কাজও ধীরে ধীরে হচ্ছে বলে পঞ্চায়েত কর্তারা জানাচ্ছেন। আর ওই দুই শর্ত পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত টাকা দিতে নারাজ কেন্দ্র।
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন,‘‘ এ সব কেন্দ্রের বাহানা। আসলে রাজ্যকে বঞ্চিত করতে চায় দিল্লি। গত কয়েক বছরে দেশের মধ্যে বাড়ি তৈরিতে সেরা কাজ করেছে বাংলা। এখন তাই নানা অজুহাতে বাংলাকে আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’