বিতর্কিত সেই রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।
শিয়রে বিধানসভা ভোট। রেল নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত ছিলই। এ বার রেলশহরের সৌন্দর্যায়ন ঘিরে সামনে এল কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি ও পুরসভার সংঘাত। প্রশ্ন উঠছে, রাস্তা কার?
খড়্গপুর শহরের আইআইটি সংলগ্ন বাইপাস বা কেশিয়াড়ি রোড ঘিরে এমনই জটিলতা তৈরি হয়েছে। মাস দু’য়েক আগে পুরীগেট উড়ালপুলের নিচে কেশিয়াড়ি মুখী এই সড়কের সৌন্দর্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় খড়্গপুর পুরসভা। রাজ্যের ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে ওই সড়কের মাঝে ডিভাইডারে মূর্তি বসানো, সবুজায়ন-সহ নানা পরিকল্পনা করা হয়। তবে কাজ শুরু হতে আইআইটির তরফে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পুরসভার। এমনকি আইআইটি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও সুরাহা হয়নি। থমকে গিয়েছে সৌন্দর্যায়ন। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি,
ওই সড়ক পূর্ত দফতরের হওয়া সত্ত্বেও আইআইটি সড়কটি তাদের বলে দাবি করেছে।
খড়্গপুরের পুরপ্রশাসক তথা শহরের বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন, “ওই কেশিয়াড়ি রোড বা আইআইটি বাইপাস রাজ্যের পূর্ত দফতরের অধীনে বলে শহরবাসী জানে। অথচ আমরা ওই সড়কে সামান্য সৌন্দর্যায়নের কাজ করতে চাওয়ায় আইআইটি বাধা দিয়েছে। এটা তো ঠিক নয়। আমরা বিষয়টি পূর্ত দফতরকে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলেছি।” খড়্গপুর আইআইটি-র রেজিস্ট্রার তমাল নাথের পাল্টা প্রশ্ন, “ওই সড়কে সৌন্দর্যায়নের কাজ করার জন্য খড়্গপুর পুরসভা আমাদের চিঠি দিয়েছে। ওই সড়ক যদি আমাদের না হবে তাহলে পুরসভা আমাদের চিঠি দিল কেন?”
রেলশহর খড়্গপুরে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান রেলের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত বরাবরের। পুরসভার অধীনে থাকা রেলের এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজে রেল বাধা দেওয়ায় মামলা গড়িয়েছিল আদালতে। তার পরেও বারবার উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে রেলের বাধার মুখে পড়েছে পুরসভা। নির্বাচন এলেই এই বিষয়গুলিকে সামনে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে বেঁধে রাজ্যের শাসক তৃণমূল। সেই তরজায় নবতম সংযোজন পুরসভার সঙ্গে আইআইটির দ্বন্দ্ব।
স্থানীয়দের দাবি, বছর সতেরো আগে আইআইটি কর্তৃপক্ষ বিশাল পাঁচিল দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভবন ও হস্টেলগুলি সুরক্ষিত করে। আইআইটি-র মধ্যে সাধারণের চলাচলে জারি হয় বিধিনিষেধ। এখন শহরের পুরীগেট থেকে ঘুরপথে প্রেমবাজার যেতে এই কেশিয়াড়ি রোডই ভরসা জেলাবাসীর। ওই সড়কের একদিকে আইআইটির পাঁচিল এবং অন্যদিকে রয়েছে রেলপথ। রেলপথ ও সড়কের মাঝেও রয়েছে একটি জীর্ণ পাঁচিল। বছর কয়েক আগেই ওই সড়ক সংস্কারের কাজও করেছে পূর্ত দফতর। এখন পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রণজয় কুমারও বলছেন, “পুরীগেট উড়ালপুল থেকে ওই কেশিয়াড়ি রোড যে আমাদের পূর্ত দফতরের অধীনে এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই।”
যদিও আইআইটিকে দেওয়া পুরসভার চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই সড়ক তাঁদের বলে ইঙ্গিত করেছেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। রেজিস্ট্রার বলছেন, “ওই সড়কের পরে রেললাইনের ধার ঘেঁষে যে পাঁচিল রয়েছে সেটাও আইআইটির। আর আমরা নিজেদের এলাকায় সার্বিক সৌন্দর্যায়নের জন্য পরিকল্পনা করেছি। সেটা আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি।” যদিও পুরপ্রশাসক প্রদীপের দাবি, “এর আগেও ওই রাস্তায় পথবাতি-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ আমরাই করেছি। আর সৌন্দর্যায়ন তো কোনও জবরদখল নয়। তাছাড়া আইআইটিও তো পুরসভার অধীনে। তাই আইআইটির উদ্দেশ্য
আমাদের ভাবাচ্ছে।”