কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে কলকাতার বিকল্প দ্বিতীয় বিমানবন্দর তৈরির জন্য কলকাতা শহর-লাগোয়া সাড়ে তিন হাজার একর জমির সন্ধানে নেমেছে রাজ্য সরকার। প্রতীকী ছবি
যত দূর চোখ যায়, বিঘের পর বিঘে মেছো ভেড়ি। কৃষি জমি কেটে তা তৈরি হয়েছে। ভেড়ির পাশাপাশি ধান জমি। রয়েছে গোটা তিরিশ কবরস্থান। মেছোভেড়ি, কবরস্থান লাগোয়া নাংলা ও পালপুর গ্রাম। ওই দুটি গ্রামের জনবসতি হাজার পাঁচেক।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে কলকাতার বিকল্প দ্বিতীয় বিমানবন্দর তৈরির জন্য কলকাতা শহর-লাগোয়া সাড়ে তিন হাজার একর জমির সন্ধানে নেমেছে রাজ্য সরকার। ভাঙড়-২ ব্লকের ভোগালি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রাথমিক ভাবে ওই জমি অনুসন্ধানের সমীক্ষা শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। কলকাতা লাগোয়া একমাত্র ভাঙড়েই এক লপ্তে এতটা খালি জমি মিলতে পারে বলে অনুমান করে দিন তিনেক ধরে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। তবে দরকারমাফিক জমির জোগান এবং অধিগ্রহণ-জট নিয়ে প্রশাসনের অন্দরেই বিস্তর আশঙ্কাও রয়েছে। নন্দীগ্রাম থেকে ভাঙড়ে জমি অধিগ্রহণে আগেও নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
ভাঙড় বিমানবন্দরের জন্য প্রস্তাবিত সেই জমি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ওই এলাকার বাসিন্দা চাষি সামাদ মোল্লা বলেন, “ভাঙড়ের জমির খুব পুষ্টি। এখানে অনেক ফসল হয়। এখানকার চাষিরা তাই জন্যই ফসলের বিশেষ দাম পায় না। সেই কারণে এই এলাকার প্রায় নব্বই শতাংশ জমি প্রায় বছর দশেক আগে মাছ ব্যবসায়ীদের লিজ় দেওয়া হয়েছে। সেই জমি কেটে ভেড়ি তৈরি করে মাছের চাষ হয়। তার ফলে বছরে এক লপ্তে মোটা টাকা আয় হয় জমির মালিক চাষিদের। শুধু চাষ করে আর লোকসানের মুখোমুখি হতে চান না এখানকার চাষিরা।" ওই এলাকার কৃষি জমির বাজার দর কাঠা প্রতি প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সামাদ আরও জানিয়েছেন, "এখানে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা মাছ ব্যবসায়ীদের নিজের জমি লিজ় দিয়েছেন। আবার তাঁরাই ভেড়িতে জোগাড় খাটেন। এ ভাবে কিছুটা হলেও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরেছে অনেকের।" পালপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মুদাস্সর হোসেন বলেন, "গ্রামে কেউ চাষাবাদে জোগাড় খাটেন। তবে বেশির ভাগ গ্রামের মানুষই মাছের ভেড়িতে কাজ করেন। এখানকার কয়েক হাজার বিঘের মেছো ভেড়িতে এলাকার লক্ষাধিক লোকের রুজিরুটি জড়িয়ে। বন্ধ হলে খুব অসুবিধা হবে।"
বিভিন্ন কবরস্থানের সঙ্গেও স্থানীয় আবেগ জড়িয়ে। নাংলা গ্রামের আদি বাসিন্দা, বর্তমানে ঘটকপুকুর এলাকার এক ব্যবসায়ী পরিবারের কর্তা বলেন, "আমার মতো অনেকেরই পূর্বপুরুষদের সমাধি রয়েছে ওই সব কবরস্থানে। জমি অধিগ্রহণ হলে তো মুশকিল।" ওই ব্যবসায়ীর কথায়, "উড়োজাহাজ উড়লে নামলে ওই এলাকার আশেপাশে পাওয়ার গ্রিড ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার প্রায় ৫০ ফুট উঁচু টাওয়ার ও তারেরই বা কী হবে! ওখান থেকেই গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।"
তবে জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কাইজার আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, "অসম্ভব বলে কিছু হয় না। প্রশাসন ও বাসিন্দাদের মধ্যে বোঝাপড়ায় অনেক অসাধ্যসাধনও হতে পারে।" এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শুধু খোঁজখবর চলছে। তবে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আন্দোলনে সংঘর্ষের স্মৃতি এখনও টাটকা মানুষের মনে। প্রায় বছর দেড়েক ধরে নানা টানাপড়েনের পর ভাঙড় শান্ত হয়।