মোবাইলে পেঁয়াজের বাজার দর দেখছেন এক বিক্রেতা। মঙ্গলবার, কোলে মার্কেটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
সপ্তাহখানেক আগে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৩৫-৪০ টাকা, এখন তা ৭০-৮০ টাকায় বিকোচ্ছে। আক্ষরিক অর্থেই পেঁয়াজের দামের ঝাঁঝে চোখে জল ক্রেতাদের।
গত সপ্তাহেও শহর ও জেলার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ ৪০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল। পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় সোমবার শিয়ালদহের কোলে মার্কেট পরিদর্শনে যান কলকাতা পুলিশের ডিসি (এনফোর্সমেন্ট)। দাম কেন বাড়ল, জানতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মানিকতলা, উল্টোডাঙা, কলেজ স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, ল্যান্সডাউন, লেক মার্কেটের মতো বাজারে মঙ্গলবার ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। এ দিন কোলে মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, এক কেজি পেঁয়াজ বিকোচ্ছে ৭০ টাকায়। একসঙ্গে পাঁচ কেজি কিনলে দাম ৩০০ টাকা। তাই অনেকেই দূর থেকে সেখানে এসে পাঁচ কেজি বা তার বেশি পেঁয়াজ কিনছেন। হাওড়ার এক যুবক বললেন, ‘‘ওখানে এক কেজি ৮০ টাকা। কিন্তু কোলে মার্কেটে পাঁচ কেজি কিনলে কেজিতে ২০ টাকা কম। তাই নিয়ে যাচ্ছি।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে আবার পেঁয়াজের দাম তিন গুণ বেড়েছে। ক’দিন আগে পর্যন্ত এক কেজি পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকায় পাওয়া যেত। এখন তা ৭৫-৮০ টাকা। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ব্লক ১, দেগঙ্গা, আমডাঙা, দত্তপুকুর, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, হঠাৎ দাম বাড়ায় দরদাম করেও অনেকেই পেঁয়াজ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
পেঁয়াজের দামে শহরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাও। এ দিন এক কেজি পেঁয়াজ কোচবিহারে ৭০ টাকা, মালদহ, দুই দিনাজপুর ও নদিয়ায় ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উদ্যান পালন দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক সত্যপ্রকাশ সিংহের বক্তব্য, ‘‘দুর্গাপুজোর পরে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে। দিন পনেরোর মধ্যে দাম কমবে বলে আশা করছি।’’
বীরভূমের খুচরো বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০-৮০ টাকা কেজি। কিছু জায়গায় ‘সুফল বাংলা’র স্টলে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৩ টাকা। তবে, এটা মজুত করা পেঁয়াজের দর। আগামী দিনে দাম বাড়তে পারে বলে স্টলের কর্মীরা জানাচ্ছেন। পূর্ব বর্ধমানের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়। চাষিদের দাবি, নিম্নচাপের জেরে সেপ্টেম্বরের গোড়ার বদলে পেঁয়াজের চাষ শুরু হয়েছে অক্টোবরে। এর প্রভাব বাজারে পড়ছে। টানা বৃষ্টিতে মেদিনীপুরের পেঁয়াজ চাষে ক্ষতি হয়েছে। বাঁকুড়ায় বর্ষায় পেঁয়াজের চাষই হয়নি। সেই চাষ হলে সংশ্লিষ্ট জেলায় জোগানের ঘাটতি কিছুটা মিটত বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
কিন্তু এক সপ্তাহে এতটা দাম বৃদ্ধির কারণ কী? ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রধান দুই সরবরাহকারী রাজ্য, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে অনাবৃষ্টির কারণে খারিফ বা বর্ষাকালীন পেঁয়াজের চাষ বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম। মজুতও ফুরিয়ে এসেছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল চাষি ভেন্ডর অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি তথা রাজ্য টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে-র যুক্তি, ‘‘এ বার অনেক আগেই উৎসব শুরু হওয়ায় ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পেঁয়াজ ভর্তি গাড়ি কলকাতার বাইরে আটকে দেওয়া হয়েছে। ফলে গাড়ি শহরে ঢোকার আগেই ৭০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদার তুলনায় জোগান কমার এটাও কারণ।’’
অথচ, এ দিনই দিল্লির বাজারে পেঁয়াজের দর ছিল কেজি প্রতি ৪০ টাকা। দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে ন্যূনতম রফতানি মূল্য বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার ফলে রাজধানীতে পেঁয়াজের এই দাম বলে জানা যাচ্ছে। রাজ্যের বাজারে সেই প্রভাব কবে পড়বে, তারই অপেক্ষায় বাসিন্দারা।