— প্রতীকী চিত্র।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের দিক থেকে বেলপাহাড়ির জঙ্গলে আসা বাঘটি কি জ়িনতের উল্টো দিকে এগোচ্ছে! ওড়িশার সিমলিপালের বাঘিনি জ়িনতের গলায় ছিল ‘রেডিয়ো কলার’। যদিও বেলপাহাড়ির জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো বাঘের গলায় তা নেই।তাকে খুঁজতে ভরসা, পায়ের ছাপ আর জঙ্গলে পাওয়া বিষ্ঠা। বনকর্মীদের একাংশের অনুমান, গত মাসে যে পথে ঝাড়খণ্ড থেকে জ়িনত বেলপাহাড়ির জঙ্গল হয়ে বান্দোয়ানের দিকে যায়, এই বাঘ তার উল্টো দিকে এগোচ্ছে।
রবিবার সকালে বাঁশপাহাড়ি বনাঞ্চলের মনিয়াডির জঙ্গলের ধুলোপথে এক প্রাণীর পায়ের ছাপ মিলেছিল। সেগুলি দেখে বনাধিকারিকেরা নিশ্চিত হন, তা পূর্ণবয়স্ক বাঘের পায়ের ছাপ। বিকেলে বগডোবার জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ মেলে। রাতে জুজারধরার কাছে, জঙ্গলে বাঘের বিষ্ঠা পাওয়া যায়। সোমবার সকালে কাঁকড়াঝোরের জঙ্গলেও পায়ের ছাপ মেলায় বনকর্মীদের একাংশের অনুমান, যে পথে জ়িনত বেলপাহাড়ির জঙ্গলে ঢুকেছিল তা অনুসরণ করে বাঘটি হয়তো ঝাড়খণ্ডে যেতে পারে। আবার গতিপথ বদলে ফের বান্দোয়ানের দিকেও যেতে পারে।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের যমুনাগোড়া গ্রামের কাছে রবিবার জমিতে পায়ের ছাপ মিলেছিল। এ দিন একই ধরনের ছাপ মিলেছে কিছুটা দূরে লাউপাল গ্রাম লাগোয়া আলুর খেত ও উদলবনি গ্রাম লাগোয়া ধানজমির আলে। উদলবনির অদূরে গোলকাটা গ্রামেও মাটির রাস্তায় পায়ের ছাপ মিলেছে বলে স্থানীয়দের দাবি। মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকারও বলেন, “পায়ের যে ছাপ মিলেছে, তাতে জন্তুটি বাঘ বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। যদিও ছবি মেলেনি। জন্তুটির অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছি।”
জঙ্গলের ধুলোপথে এই পায়ের ছাপ ঘিরেই তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। বেলপাহাড়ির মনিয়াডি এলাকায় রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘদিন ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর বনবিভাগে আধিকারিকের দায়িত্ব সামলানো রাজ্যের এক বনকর্তার মতে, ‘‘বাঘিনি জ়িনত ওই পথে প্রস্রাব ও বিষ্ঠা ত্যাগ করে থাকলে, এই বাঘ সে দিকেও আকৃষ্ট হতে পারে।’’ ‘রেডিয়ো কলার’ না থাকলে এ ভাবেইবাঘের গতিপথের হদিস পান বনকর্মীরা।ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) সিঙ্গরম কুলন্দাইভেল জানান, বাঘটিকে সুস্থ অবস্থায় বাগে আনতে একাধিক দল গড়া হয়েছে। তল্লাশি চলছে। ঝাড়গ্রাম-ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল সীমানায় ক্যামেরা (মূলত নাইট ভিশন) বসানো হয়েছে। পাতা হয়েছে খাঁচা। জঙ্গলের কয়েকটি জায়গা ঘিরতে জাল আনা হয়েছে। সুন্দরবনের বিশেষজ্ঞ দলকে খবর দেওয়া হয়েছে। বাঘের আনাগোনার এলাকায় বাসিন্দাদের জঙ্গলে যেতে নিষেধ করা হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপীঠে লোকালয়ের কাছে আসা একটি বাঘকে রবিবার রাতে খাঁচাবন্দি করা হয়। তাকে এ দিন কিছুটা দূরে, সুন্দরবনের ধুলিভাসানি জঙ্গলে ছাড়া হয়। কিন্তু এ দিনই ফের অন্য এক বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায় মৈপীঠের গৌড়ের চকে। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। বন দফতর জানিয়েছে, এলাকা জাল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। নজরদারি চলছে। ভয়ের কারণ নেই।
সহ-প্রতিবেদন: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো, সমীরণ দাস