প্রতীকী ছবি
পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্কুলেই এক-একটি বিষয় পড়ানোর জন্য মাত্র এক জনই শিক্ষক বা শিক্ষিকা আছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের ‘সিঙ্গল পোস্ট’ বা একক শিক্ষক-শিক্ষিকারা কি কোনও দিনই উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলির আবেদন করতে পারবেন না? প্রশ্ন ওঠার কারণ, যে-সব স্কুলে একটি বিষয়ে মাত্র এক জন শিক্ষক আছেন, সেখান থেকে তাঁরা ওই পোর্টালে বদলির আবেদন করলে তা ফিরে আসছে। শুধু শিক্ষক নয়, আবেদন ফিরে আসছে স্কুলের একমাত্র শিক্ষাকর্মী বা গ্রন্থাগারিকদেরও।
শিক্ষক শিবিরের বক্তব্য, একমাত্র শিক্ষক ওই স্কুল থেকে বদলি হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পঠনপাঠন চালানোর জন্য আর কোনও শিক্ষক থাকবেন না, এটা ঠিক। আবার এটাও তো ঠিক যে, কোনও কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার বদলি হওয়ার প্রয়োজন আছে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে। তাঁরা কি কোনও দিনই বদলির আবেদন করতে পারবেন না?
অভিযোগ, একমাত্র শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে বদলির আবেদন স্কুল-প্রধানের ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র-সহ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে পৌঁছনোর পরেই সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিষয়কেন্দ্রিক একমাত্র শিক্ষক বা শিক্ষিকার বদলির জন্য ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। একই ভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রীর থেকে শিক্ষক খুব কম, সেখানেও বদলির আবেদন করা যাচ্ছে না। হুগলির একটি স্কুলের গ্রন্থাগারিক অনিন্দিতা বসু জানান, স্কুলে তিনি একাই গ্রন্থাগারিক। তাঁরও বদলির আবেদন ফিরে এসেছে। ‘‘আমাকে রোজ প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে হয়। একটি স্কুলে তো সাধারণত এক জনই গ্রন্থাগারিক থাকেন। তা হলে আমি কি কোনও দিনই বাড়ির কাছে বদলি হতে পারব না?’ প্রশ্ন অনিন্দিতাদেবীর।
কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা অকারণে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার বদলির ছাড়পত্র আটকে রাখতে পারবেন না। প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষকের আবেদনই যদি ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে আর বদলির ছাড়পত্র পাওয়া যাবে কী ভাবে?
শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের কথা তো আমাদের ভাবতেই হবে। উৎসশ্রী পোর্টালে এই বদলির প্রক্রিয়া তো চলবে ধারাবাহিক ভাবে ও নিয়মিত। এক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীরা অন্য বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে গেলে শূন্য পদে কেউ না-কেউ একই প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন। তা হলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই বদলি প্রক্রিয়ার সুযোগ দিতে অসুবিধা কোথায়?” এসএসসি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, সব দিক খতিয়ে দেখেই বদলির সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক বদলির প্রক্রিয়া পুরো শহরমুখী হয়ে গেলে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষকের অভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ।
এসএসসি-র ওই আধিকারিক জানান, উৎসশ্রী পোর্টাল শুরু হয়েছিল ১ অগস্ট রাত ১২টা থেকে। এক মাসের মধ্যে বদলির প্রায় ১১০০ সুপারিশপত্র পাওয়া গিয়েছে।