ছত্রধর মাহাতো।—ফাইল চিত্র।
এক মহাষ্টমীতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সেই মামলায় তাঁর সাজার মেয়াদ ফুরোচ্ছে এ বছর পুজোর কয়েক দিন আগেই। তবু ‘পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি’র নেতা ছত্রধর মাহাতো এ বার জেলের বাইরে পুজোর ঘ্রাণ নিতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া থানার একটি মামলায় ঘাটশিলা থেকে ছত্রধরের বিরুদ্ধে পরোয়ানা পৌঁছেছে এ রাজ্যের কারা দফতরে। পরোয়ানায় বলা হয়েছে, ছত্রধরকে ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।
২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমীর দুপুরে লালগড়ের বীরকাঁড়ে সাংবাদিকের ছদ্মবেশধারী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ছত্রধর। সে-দিনই কাঁটাপাহাড়িতে পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি বিস্ফোরণের মামলায় ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে ছত্রধরকে অভিযুক্ত করা হয়। কাঁটাপাহাড়ির বিস্ফোরণের মামলায় ২০১৫ সালে ছত্রধর-সহ সাত জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল মেদিনীপুর আদালত। সেই মামলায় ছত্রধর-সহ চার জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমিয়ে ১০ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। চলতি মাসের শেষ লগ্নে সেই মেয়াদ ফুরোচ্ছে।
তার পরেও ছত্রধরের মুক্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, ২০০৯ সালে চাকুলিয়া থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রয়েছে লালগড় আন্দোলনের ‘মুখ’ ছত্রধরের বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন লালগড়ের আমলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছত্রধর। অসুস্থতার জন্য তিনি এই মুহূর্তে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার মধ্যেই চাকুলিয়া থানার মামলায় ছত্রধকে ঘাটশিলা আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ জারি হয়েছে বলে জানান তাঁর আইনজীবী কৌশিক সিংহ। তিনি জানান, অসুস্থতার দরুন ছত্রধরের পক্ষে এতটা রাস্তা পেরিয়ে আদালতে হাজির হওয়া সম্ভব নয়। তাই ভিডিয়ো-সম্মেলনে ছত্রধরকে হাজির করিয়ে আদালতের নির্দেশ মানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান ওই কৌঁসুলি।
ছত্রধর কারা দফতরের অধীন প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন। তাই তাঁর নামে জারি করা পরোয়ানা বিষয়ক নথিপত্র পৌঁছেছে কারা দফতরেই। প্রশাসনিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য সরকারের কারা দফতরে ছত্রধরের মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে ঘাটশিলায় পাঠিয়ে দিতে হবে। তাই ১০ বছরের মেয়াদ শেষ হলেও আদতে ছত্রধরের কবে জেলমুক্তি ঘটবে, সেই বিষয়ে সংশয় আছে বলে জানাচ্ছে প্রশাসনিক মহলের একাংশ।
ছত্রধরের অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত তাঁর স্ত্রী নিয়তি মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামী অসুস্থ থাকায় খুব চিন্তায় আছি। উনি সুস্থ হয়ে কবে গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন, সেই আশায় রয়েছি আমরা। এখনও একটি মামলায় ওঁর জামিন বকেয়া আছে।’’