—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অভিযোগ-এক: বলা হত ক্লাস করতে হবে না। সংগঠনের (টিএমসিপি) কাজ কর। তোদের পাশ করার বিষয়টা আমরা দেখে নেব। সেই সব পড়ুয়া, যাঁদের যোগ্যতা নেই, তাঁদের পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, অনার্স পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন একাধিক বিষয়ে অভিযোগ জানালেন প্রসূতি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক নীলরতন দাস।
অভিযোগ-দুই: কখনও নম্বর কমিয়ে ফেল করিয়ে দিতে বা নম্বর না থাকলেও অনার্স পাইয়ে দিতে বলা হয়েছিল। না করায় বদলি হতে হয় শিক্ষক-চিকিৎসক শান্তনু হাজরাকে।
এই রকম একটি-দু’টি নয়। আর জি করের নির্যাতিতার বিচার চেয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে শুক্রবার আয়োজিত কনভেনশনে এমন ‘হুমকি সংস্কৃতি’কে ‘ডন কালচার’ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সেখানকার শিক্ষক-চিকিৎসকেরাই, যাঁরা দিনের পর দিন এই ‘হুমকি’র সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ। উঠে এল এমনই অসংখ্য অনিয়মের কথা। আর জি কর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্রাক্তনী এবং আইএমএ-র শিলিগুড়ি শাখার উদ্যোগে এই সভা ডাকা হয়েছিল এ দিন। শিক্ষক-চিকিৎসকদের অনেককেই বলতে শোনা গেল, কী করে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হয়, তা আর জি কর কাণ্ডের পরে পড়ুয়ারা দেখিয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের কথা, আর চুপ করে থাকা যাবে না।
এই ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র সূচনা জলপাইগুড়ি থেকে বলেও সরব হলেন আর জি করের প্রাক্তনী জলপাইগুড়ির চিকিৎসক পান্থ দাশগুপ্ত। অধ্যক্ষের নাম না করে এখানকার অভিযুক্ত সবার পদত্যাগের দাবিও উঠল। সভার শুরুতে বক্তব্য দিয়ে ঘণ্টাখানেক থেকে সভাকক্ষ ছেড়ে বার হয়ে যান অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা। পরে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে অধ্যক্ষ এ দিন বক্তব্য রাখার সময় বলেন, “যা ঘটনা ঘটেছে, আমাদের এ সবের বিরুদ্ধে ঐক্য (ইউনিটি) বজায় রাখতে হবে।” সভাকক্ষে তখন নিশ্চুপ হয়ে বসে প্রাক্তন ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত। ‘হুমকি সংস্কৃতি’র বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ, ঘেরাওয়ের মুখে দিন কয়েক আগেই যাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
এ দিন অধ্যক্ষের বক্তব্যের পরে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক নীলরতন দাস বলেন, “এখন আপনি ‘ইউনিটি’ গড়ে তোলার কথা বলছেন। কারা এ সব করছে? এই সমস্ত মুখ আমাদের মধ্যেই রয়েছে। তাদের চিনে নিতে হবে। এখানেই এক সময় নমস্কার (সুশান্ত রায়কে) করার জন্য লাইন পড়ত।” উল্লেখ্য, সুশান্ত রায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এলে তাঁর পা ছুঁয়ে কর্তৃপক্ষের অনেকে প্রণাম করতেন বলে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন।
সভায় এসেছিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবীণ সেই চিকিৎসকের প্রশ্ন, “কী ভাবে এ সব ঘটছে? কী ভাবে এই মেডিক্যালে উত্তীর্ণ এক ছাত্র অভীক দে-কে হস্টেলে এসি লাগানো, সাজানো ঘর দেওয়া হচ্ছে? কে অনুমোদন করছে?” সভায় বক্তব্য রাখতে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের ফ্যাকাল্টি প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী। তিনি বলেন, “(কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে) আমরাই শিখিয়েছি। এখন পিঠ ঠেকে গিয়েছে। মুখোশ খুলে যাবে বলে নানা কথা বলছেন। এই হলঘরে বসে জন্মাদিন পালন করেছেন। প্রশাসকের পদে থেকে করতেন।” তাঁর সংযোজন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের বাইরের লোক (সুশান্ত রায়, অভীক দে) এখানকার সকলকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন কী ভাবে, বুঝতে পারছি না। নিজেকে প্রশ্ন করবেন। বেলাইন হলে এর পরে আমাদেরই টেনে নামাতে হবে।”
এ দিন জলপাইগুড়ির আইএমএ-র সদস্য পান্থ দাশগুপ্ত বলেন, “হুমকি সংস্কৃতির জন্ম জলপাইগুড়িতে। তাঁকে (সুশান্ত রায়) আমরা জলপাইগুড়ি আইএমএ-র সম্পাদকের পদ থেকে সাসপেন্ড করার জন্য সুপারিশ করেছি। জনতার আদালত বসিয়ে এঁদের বিচার করতে হবে।” সুশান্ত রায়কে ফোন করা হলেও তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি।