Fake Advertisements

সরকারি কলেজে ডাক্তারিতে ‘নিশ্চিত ভর্তি’র বিজ্ঞাপনী টোপ

সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তা কেউ কি দিতে পারেন? স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, ‘না।’ মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নজরে আসতেই খোদ স্বাস্থ্যসচিব ফোন করে জানান কলকাতার নগরপালকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কোনও অগ্রিম টাকা ছাড়াই, রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নিশ্চিত। তবে সেই ভর্তির পরে দিতে হবে ছ’লক্ষ টাকা! সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘হাতছানি’ দিচ্ছে শহরের বুকে চলা কোচিং সেন্টার।

Advertisement

কিন্তু সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তা কেউ কি দিতে পারেন? স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, ‘না।’ মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নজরে আসতেই খোদ স্বাস্থ্যসচিব ফোন করে জানান কলকাতার নগরপালকে। তবে ওই কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর শুধুই মৌখিক ভাবে বলেছে। তার ভিত্তিতেই খোঁজ শুরু করেছে লালবাজার। স্বাস্থ্যসচিব জানিয়েছেন, দফতর লিখিত অভিযোগ দায়ের করবে।

ডাক্তারিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মোটা টাকার লেনদেন, ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্রের অভিযোগ উঠেছে আগে। কিন্তু এমবিবিএসে ভর্তির নিশ্চয়তা এবং তার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা দাবির বিজ্ঞাপন কী ভাবে কোনও সংস্থা দিতে পারে, সেই প্রশ্ন একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এ দিন সকালেই জানান, পুলিশকে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যদিও তার কয়েক ঘণ্টা পরেও শেক্সপিয়র সরণির ওই কোচিং সেন্টারে গিয়ে বোঝা গেল, সেটি রমরমিয়েই চলছে।

Advertisement

বড় রাস্তার উপরেই পাঁচতলা বাড়ি। দোতলায় উঠে দেখা গেল, এক ফালি রিসেপশনে কাজ করছেন এক যুবক। তাঁর কাছে বিজ্ঞাপনটিতে থাকা সংস্থার নাম করা হল। সাক্ষাতের সময় নেওয়া আছে কি না জানতে চাইলেন তিনি। ‘না’ বলতেই যুবক দাবি করলেন, ওই সংস্থার কারও সঙ্গে কথা বলতে হলে আগাম সময় নিতে হয়।

কিছু ক্ষণ পরে এক মহিলা কর্মী এসে ভিতরের ছোট্ট একটি ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে বসে থাকা যুবক নিজেকে সংস্থার মালিক পরিচয় দিয়ে জানালেন, তাঁদের কোচিং সেন্টার সম্পূর্ণ আবাসিক। পাটুলিতে সংস্থার হোম রয়েছে, সেখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাইয়ের ভর্তির নামে খোঁজ নেওয়ার ফাঁকে জানতে চাওয়া হল, ‘‘সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তা দিচ্ছেন কী ভাবে?’’

যুবকের দাবি, বিজ্ঞাপনে নজর টানতেই এমন ‘অভিনব’ ভাবনা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে পড়ুয়াদের মেধা যাচাই করা হয়। তাতে উত্তীর্ণ হলেই ভর্তি নেওয়া হয়। বাকিটা সবই বিজ্ঞাপনে লেখা রয়েছে।’’ চলতি বছরে ইতিমধ্যে দু’জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন বলেও দাবি তাঁর। দুপুরে এমন দেখার পরে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফের বিষয়টি নগরপালকে বলা হচ্ছে। তবে, এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি।

কোচিং সেন্টারটির মালিক সৌরীশ ঘোষ রাতে ফোনে বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপনে বলা আছে, নিটে ন্যূনতম ৩৬৬ পেতে হবে। কিন্তু ওই নম্বরে সরকারি কলেজে সুযোগ পাওয়া যায় না। যদিও পড়ুয়ার মেধা যাচাই করে ভর্তি নিয়ে এমনই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে সরকারি কলেজে ভর্তি নিশ্চিত। আগেও সেটা হয়েছে।’’

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘এমন বিজ্ঞাপন কী ভাবে কেউ দিতে পারেন? অবশ্য এখানে কিছুই অসম্ভব নয়। স্বাস্থ্য দফতরে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ভুয়ো শংসাপত্রে ভর্তি— সবের তদন্ত প্রয়োজন।’’ ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এমন বিজ্ঞাপন আগে দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা অবশিষ্ট থাকলে এমন ঘটতে পারে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement