বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে এসপি-র কাছে নালিশ নির্যাতিতার বাবার

কলাভবনের ছাত্রীর যৌন নিগ্রহের ঘটনায় বীরভূমের জেলা পুলিশ সুপারের কাছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত এবং কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানালেন নির্যাতিতার বাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে সোমবার দুপুরে বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কাছে একটি এক পাতার অভিযোগ জমা দেন তিনি। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ছাত্রীর নির্যাতনের মামলার সঙ্গে নতুন ধারা যোগ হবে, নাকি নতুন মামলা শুরু করা হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share:

জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

কলাভবনের ছাত্রীর যৌন নিগ্রহের ঘটনায় বীরভূমের জেলা পুলিশ সুপারের কাছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত এবং কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানালেন নির্যাতিতার বাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে সোমবার দুপুরে বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার কাছে একটি এক পাতার অভিযোগ জমা দেন তিনি। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ছাত্রীর নির্যাতনের মামলার সঙ্গে নতুন ধারা যোগ হবে, নাকি নতুন মামলা শুরু করা হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

Advertisement

বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবশ্য আগেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন ছাত্রীর বাবা। তবে এ দিন লিখিত অভিযোগের পর প্রশ্ন উঠেছে, আগে যখন নির্যাতন নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তখনই পুলিশকে এ বিষয়ে জানাননি কেন? ইউজিসির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মেয়েকে দেখা করতে না-দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ নির্যাতিতার বাবার? অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, কলাভবনের অধ্যক্ষকে মেয়ের বিষয়ে জানাতে গেলে অধ্যক্ষ তা লঘু করে দেখাতে চেয়েছিলেন। উল্টে তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করে সব ‘মিটমাট’ করে নিতে বলেন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, পুলিশে গেলে তাঁর মেয়ের ‘কেরিয়ার’-এর ক্ষতি হবে, এ কথাও উপাচার্য বলেছেন বলে তাঁর দাবি।

Advertisement

গত ২৬ অগস্ট বিশ্বভারতীর কলাভবনের প্রথম বর্ষের ভিন রাজ্যের এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে সিনিয়র তিন ছাত্র এবং এক অজ্ঞাতপরিচয় বহিরাগতের বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রী প্রথমে কলাভবনের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। যার জেরে অভিযুক্ত তিন ছাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়। পড়ুয়াদের চাপে ও সংবাদমাধ্যমে সব প্রকাশিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থার সুপারিশ করে বিশ্বভারতীর বিশাখা কমিটি। বিশ্বভারতীর পক্ষে ছাত্র পরিচালক হরিশ্চন্দ্র মিশ্র বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। ওই রাতে অভিযুক্ত তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতেরা এখন জেল হাজতে। ইতিমধ্যে ইউজিসি-র একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন। তবে নির্যাতিতা ছাত্রীর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়নি।

যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের মুখপাত্র সন্দীপ বসু সর্বাধিকারী। তবে, বিশ্বভারতীর মিডিয়া ইন্টেরফেস কমিটির চেয়ারপার্সন সবুজকলি সেন জানিয়েছেন, তিনি কলকাতায়। ওখানে কী হচ্ছে, তাঁর জানা নেই। আর কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানা বলেন, “কলাভবন ও বিশ্বভারতীর কাজকর্মেই মন দিতে চাই।” বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আগাগোড়াই দাবি করে এসেছে, কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধের নিয়মবিধি মেনেই কলাভবন কাণ্ডের তদন্ত করা হয়েছে। বিশ্বভারতীর সূত্রের দাবি, নির্যাতিতার বাবাকে দিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করানোর পিছনে রাজনৈতিক মদত রয়েছে। পুলিশের একটি অংশও সেই পরিকল্পনার পিছনে রয়েছে বলে অভিযোগ।

আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, “নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই ঘটনার একটি মামলা রয়েছে। তার তদন্তও চলেছে। অভিযোগটি খতিয়ে দেখে ওই মামলার সঙ্গে কয়েকটি নতুন ধারা ও নাম জুড়ে দেওয়া হতে পারে। অথবা নতুন একটি মামলা দায়ের করা হতে পারে। শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

এ দিন সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সভানেত্রী মালিনী ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিল এবং সভা হয় বোলপুরের চিত্রা মোড়ে এবং ভুবনডাঙ্গায়। তিনি বলেন, “মেয়েটির পাশে আছি। দ্রুত এবং যথাযথ পুলিশি তদন্ত প্রয়োজন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement