—প্রতীকী চিত্র।
কম্পিউটারের সফটওয়্যারের ত্রুটি কাজে লাগিয়ে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) টিকিট বুকিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি দুর্গাপুরের কোকআভেন থানায় এমনই অভিযোগ করেছেন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ময়ূরী ভাসু। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে কী ত্রুটি, তা অবশ্য জানা যায়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, সংস্থাটি যে টাকা এসবিএসটিসি-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়, সম মূল্যের টিকিট এসবিএসটিসি ওই সংস্থাকে দেয়। বদলে সংস্থাটি টিকিট বিক্রি পিছু নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেয়ে থাকে। কিন্তু ২০২১-র ৩১ মার্চ ‘ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ পরীক্ষা করে এসবিএসটিসি-র ‘চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট’ অনলাইন টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায় ৭ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার গরমিল দেখতে পান। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান, বেসরকারি সংস্থাটি বেআইনি ভাবে দিনের পর দিন অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করেছে। কিন্তু সেই অর্থ এসবিএসটিসি-র ঘরে জমা পড়েনি। একটি বাইরের অডিট সংস্থা ২০২১-এর ৩০ অক্টোবর রিপোর্ট দিয়ে জানায়, ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ই-টিকিট বুকিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটির বিরুদ্ধে ৭ কোটি ১৯ লক্ষ ১০ হাজার ৬৪৬ টাকার গরমিল ধরা পড়েছে।
এর পরেই রাজ্যের ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল ২০১৮-২০২১ পর্যন্ত এসবিএসটিসি-র নথি ও অ্যাকাউন্টস খতিয়ে দেখে ২০২২-এর ২৮ জানুয়ারি এসবিএসটিসি-তে পাঠানো রিপোর্টে জানান, ওই সংস্থা বুকিং সফটওয়্যারের ত্রুটি কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক গরমিল করেছে। সম্প্রতি পরিবহণ দফতর থেকে দ্রুত সংস্থাটির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ আসে।
এসবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, দরপত্রের মাধ্যমে ২০০৭ থেকে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি সংস্থা এসবিএসটিসি-র ‘বুকিং এজেন্ট’ হিসাবে কাজ শুরু করে। ২০১৩-য় ই-টিকিট চালু করে। সংস্থাটি ২০১৪-র ১৫ অক্টোবর থেকে দুর্গাপুরে ই-টিকিট বুকিংয়ের ‘প্রিন্সিপাল বুকিং এজেন্ট’-এর দায়িত্ব পায়। ২০১৫ থেকে এসবিএসটিসি-র ‘লগ ইন আইডি’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ দিয়ে ই-টিকিট কাটছে সংস্থাটি। সংস্থাটি নিজে টিকিট বুকিংয়ের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী টিকিট বিভিন্ন কাউন্টারে এবং অন্য এজেন্টদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ২০২০-র ডিসেম্বরে সংস্থাটি পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, কলকাতা, হাওড়া প্রভৃতি জেলার প্রিন্সিপাল বুকিং এজেন্টের দায়িত্ব পায়। বিষয়টি নিয়ে নিগমের চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডলের বক্তব্য, “প্রায় দেড় বছর ধরে তদন্ত হয়েছে। পরিবহণ দফতরের নির্দেশে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত সংস্থাটি। সংস্থার আধিকারিক অমরেশ মণ্ডলের দাবি, “কম্পিউটারে গোলমাল হতে পারে। এটি নিয়ে মামলা চলছে। মামলার যা রায় হবে, সেটা মেনে নিতে হবে। প্রতারণা হয়নি।”
এ দিকে, এখনও অভিযুক্ত সংস্থাটি প্রিন্সিপাল বুকিং এজেন্ট হিসাবেই কাজ করছে বলে অভিযোগ আইএনটিইউসি অনুমোদিত এসবিএসটিসি শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক হারাধন দত্তের। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, ঠিক তদন্ত কী সত্যিই চাইছেন কর্তৃপক্ষ?” বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের তোপ, “বাস কেনা হচ্ছে না, সারাই হচ্ছে না। এর কারণ, এ সব দুর্নীতি।” যদিও, সুভাষ বলেন, “কে কী বলছেন জানি না! অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পরবর্তী যেমন নির্দেশ আসবে তেমন পদক্ষেপ করা হবে।”