torture

Torture: শিশু পরিচারিকার গায়ে গরম জল, মারধরের নালিশ

প্রশাসনের তরফে নির্যাতিতাকে উত্তরপাড়ার হোমে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চণ্ডীতলা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১ ০৬:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

এগারো বছরের মেয়েটির চোখের তলায় ও নাকে দাগ। হাতে দগদগে ফোস্কা। আঘাতের চিহ্ন মাথায়।

Advertisement

সোমবার চণ্ডীতলার বড় তাজপুরের একটি বাড়ি থেকে ওই বালিকাকে উদ্ধারের পরে তার শরীরের সব দাগ দেখে এবং তার কারণ জেনে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। মা-মরা মেয়েটিকে মানুষ করার নামে বড় তাজপুরের এক দম্পতি বাড়ির সব কাজ করাতেন এবং ভুলচুক হলেই বেধড়ক মারধর করা হত বলে অভিযোগ। হাতা-খুন্তি দিয়ে মার থেকে গায়ে গরম জল ছুড়ে দেওয়া— বাদ থাকেনি কিছুই। দম্পতির এক মেয়ে রয়েছে। সে দশম শ্রেণির ছাত্রী।

প্রশাসনের তরফে নির্যাতিতাকে উত্তরপাড়ার হোমে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। হুগলি জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির (সিডব্লিউসি) চেয়ারপার্সন শুভাশিস নন্দী বলেন, ‘‘অমানবিক ঘটনা। ওই বালিকার ওর উপরে হওয়া অত্যাচারের কথা অনেকটাই বলেছে। তবে, এখনও সে ভয়ে আছে। ওর সঙ্গে আরও কথা বলা হবে। মেডিক্যাল রিপোর্ট নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট বানিয়ে এর বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটাই করা হবে।’’

Advertisement

শ্রীরামপুরের যুগ্ম শ্রম কমিশনার দফতরের এক আধিকারিক জানান, কোনও নাবালককে দিয়ে কাজ করানো শিশুশ্রম বিরোধী আইন লঙ্ঘন। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। ওই আইনে দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে চাইল্ড লাইনে খবর আসে, বড় তাজপুরের মল্লিকপাড়ায় ওই দম্পতির বাড়িতে বালিকাকে দিয়ে পরিচারিকার কাজ করানো হয়। ঘর ঝাঁট দেওয়া এবং মোছা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা— সবই করতে হয়। ভুল হলে মারধর করা হয়। ভাল ভাবে খেতে দেওয়া হয় না। চাইল্ড লাইনের তরফে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে বিষয়টি জানানো হয়। সোমবার চাইল্ড লাইন, শ্রীরামপুর শ্রম দফতর, জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিট এবং চণ্ডীতলা থানার আধিকারিক ওই বাড়িতে যান।

মেয়েটির সঙ্গে আধিকারিকেরা কথা বলেন। সে জানায়, প্রায়ই তাকে মারধর করা হত। সম্প্রতি গায়ে গরম জল ঢেলে দেওয়া হয়। তাতেই শরীরের নানা জায়গায় ফোস্কা পড়ে। বাঁ চোখে দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলেও তার সঙ্গে কথা বলে ওই আধিকারিকেরা জানতে পারেন। বালিকা আরও জানায়, তাকে বারান্দায় একা শুতে দেওয়া হয়। মারধরের জেরে ক্ষত হলেও চিকিৎসা করানো হয় না। পড়াশোনাও করানো হয় না।

ওই বাড়ি থেকেই মেয়েটিকে সিডব্লিইউসি-র সামনে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে হাজির করানো হয়। সেখানেও সে অত্যাচারের কথা বলে। মূলত গৃহকর্ত্রীই মারধর করেন বলে সে জানায়। সিডব্লিউসি-র আধিকারিকদের কাছে অবশ্য দম্পতি অভিযোগ অস্বীকারের চেষ্টা করেন। দাবি করেন, মেয়েটিকে যত্নেই
রাখা হয়। সরকারি আধিকারিকদের অবশ্য মনে হয়েছে, মেয়েটির উপরে প্রচণ্ড অত্যাচার হয়। হোমে পাঠানোর আগে চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে মেয়েটির মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।

সিডব্লিউসি সূত্রের খবর, মেয়েটির চিকিৎসা দরকার। শারীরিক ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি তার মানসিক ভীতি কাটিয়ে তোলারও চেষ্টা করা হবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, অভিযুক্ত মহিলার বাপের বাড়ি বর্ধমান শহরে। সেখানে মেয়েটির মা পরিচারিকার কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। দম্পতি মেয়েটিকে তার বাবার কাছ থেকে নিয়ে আসেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement