প্রতীকী ছবি।
পুরনো স্বাস্থ্য বিমার পলিসি নতুন সংস্থার জিম্মায় সরিয়ে সঙ্কটে পড়েছিলেন রোগিণী। তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো রোগ গোপন করার অভিযোগ তুলে জরায়ুর টিউমার অস্ত্রোপচারের খরচ মেটাতে অস্বীকার করে সেই সংস্থা।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের একটি সাম্প্রতিক রায় গ্রাহকেরই পাশে দাঁড়িয়েছে। ইনশিওরেন্স রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অথরিটি (আইআরডিএ)-র নিয়ম অনুযায়ী, পুরনো মেডিক্লেম পলিসি অন্য সংস্থার কাছে ‘পোর্ট’ করালে আগের চুক্তির সব সুবিধাই গ্রাহক পাবেন বলে জানিয়েছে হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
তার আগে অবশ্য দু’বছর মামলা লড়তে বাধ্য হন ঝাড়গ্রামের কলেজ শিক্ষিকা, শ্রীরামপুরের বাসিন্দা প্রিয়ঙ্কা মুখোপাধ্যায় বসু। তবে রায়ের পরে অভিযুক্ত স্টার হেলথ অ্যান্ড অ্যালায়েড ইনশিওরেন্স সংস্থাটিও ভুল স্বীকার করেছে। অস্ত্রোপচার-চিকিৎসার ১৮১২৪৫ টাকা, গ্রাহককে মানসিক নির্যাতন ও হেনস্থার জেরে ২০০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং মামলার খরচ বাবদ ১০০০০ টাকা সেপ্টেম্বর মাসে মিটিয়ে দিয়েছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: কর্মিসভায় লিড বাঁধলেন অনুব্রত
নতুন স্বাস্থ্য বিমা করানোর সময়ে গ্রাহকের পুরনো অসুখ বাবদ খরচ পেতে সাধারণত চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। আইআরডিএ-র নিয়মে পুরনো পলিসিটি নতুন সংস্থার কাছে পোর্ট করলে নতুন করে এই অপেক্ষার দরকার নেই। তবু ভুগতে হয় প্রিয়ঙ্কাদেবীকে। ২০০৭ সালে করা এক লক্ষ টাকার পলিসি ২০১৭-র মে মাসে ন্যাশনাল ইনশিওরেন্সের থেকে স্টার সংস্থার কাছে তিন লক্ষ টাকার চুক্তিতে পোর্ট করান তিনি।
২০১৭ সালের অগস্টে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘ইউটেরাইন ফাইবরয়েড এমবলাইজ়েইশন’ অস্ত্রোপচারের প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শুভ্র রায়চৌধুরী মারফত বিমা সংস্থার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁকে বলা হয়, ওই রোগ বিমার আওতায় পড়ে না। অস্ত্রোপচারের পরে প্রিয়ঙ্কার চিকিৎসক ফের স্টার-কে চিঠিতে জানান, এ কোনও আলঙ্কারিক বা কসমেটিক চিকিৎসা নয়, জীবনদায়ী। বিমায় এর খরচ ধরা না গেলে তিনি চিকিৎসক সংগঠনকে তা জানাবেন। এর পরে বিমা সংস্থাটি অন্য কারণ দেখিয়ে বলে, ২০১০ সালেও প্রিয়ঙ্কার জরায়ুর টিউমারের অন্য ধরনের একটি অস্ত্রোপচারের ইতিহাস আছে, যা তিনি জানাননি। ফলে তাঁরা ওই টাকা দিতে অপারগ।
আইনজীবী গোবিন্দ ঘোষের মাধ্যমে আদালতে যান রোগিণী। গোবিন্দবাবু শুনানিতে দাবি করেন, বার বার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে টাকা মেটাচ্ছে না বিমা সংস্থাটি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারকেরাও জানান, সাত বছরে দু’বার জরায়ুতে টিউমার হলেই তা ‘ক্রনিক’ অসুখ বলা যায় না। আগের টিউমারের ফলেই ফের টিউমার হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল বলে স্টারের মুখপাত্র সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী আদালতের রায় মেনে নিয়েছেন।