বিয়ের রেজিস্ট্রি হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
ধর্মীয় পরিচয় দেখে এগোয় না প্রেম। রত্না ও সুপ্রভাতের ক্ষেত্রেও ঘটনাটা ব্যতিক্রমী নয়। তবে যখন বিয়ে করবেন বলে মনস্থ করলেন দু’জন, ভেবেছিলেন গাঁয়েগঞ্জে এ সব নিয়ে জটিলতা না তৈরি হয়।
তেমনটা অবশ্য ঘটেনি। দুই পরিবারের সমর্থনেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন-লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি গ্রামে চারচক্ষুর মিলন হল। বিবাহ সূত্রে বাঁধা পড়লেন রত্না খাতুন ও সুপ্রভাত মৃধা। গ্রামের বহু মানুষ উপস্থিত থেকে আশীর্বাদ জানিয়েছেন নবদম্পতিকে।
পাশাপাশি গ্রামে থাকেন রত্না ও সুপ্রভাত। ২ নম্বর সাহেবখালির সুপ্রভাত মাস পাঁচেক আগে পুকুরিয়ার রত্নাকে এক ঝলক দেখেন। সুপ্রভাতের কথায়, ‘‘প্রথম বার দেখেই পছন্দ হয়েছিল। অনেক চেষ্টায় ফোন নম্বরটা জোগাড় করি। কথা শুরু হয়। দু’জনে এক সময় বিয়ে করব ঠিক করি। ভয় ছিল, দুই পরিবার যদি মেনে না নেয়।’’
বছর বাইশের সুপ্রভাত স্নাতক। গৃহশিক্ষকতা করেন। চাকরির চেষ্টাও করছেন। কিছু দিন আগে রত্নার বাবা খাইরুল কারিগরকে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। খাইরুল বলেন, ‘‘প্রথমটায় একটু হকচকিয়ে যাই। পরে মনে হল, ওদের বিয়ের স্বপ্নপূরণের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালে যদি কোনও ভুল পদক্ষেপ করে ফেলে, তবে তা খুবই বেদনাদায়ক হবে।’’ খাইরুল বলেন, ‘‘ওরা সুখী হলেই আমরা খুশি। ধর্ম আগে নয়, ভালবাসাই সব।’’
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ। নবদম্পতিকে অনেক শুভেচ্ছা।’’ বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের দুই পরিবার যে ভাবে ভালবাসাকে জাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে রাখলেন, তা অবশ্যই সমাজের কাছে শিক্ষণীয়।’’ এ প্রসঙ্গে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয়কৃষ্ণ কউল ও হৃষিকেশ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেন বিডিও। নিজের সঙ্গী পছন্দ করার অধিকার যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ-মহিলার আছে, তা জানায় আদালত।
টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক মহারাজ পরিশুদ্ধানন্দ বলেন, ‘‘বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’’ হিঙ্গলগঞ্জের মৌলানা আয়ুব মোল্লার কথায়, ‘‘বিয়ে ব্যক্তিগত বিষয়। বিশেষ করে এই বিয়েকে রাষ্ট্রের আইনও অনুমোদন দেয়।’’