অনুব্রত মণ্ডলের এসএসকেএম বাস নিয়ে ঘুরছে এমনই সব মিম। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত।
যার কেউ নেই, তাঁর উডবার্ন আছে!
এটুকুই সারসত্য। সে বলার ভঙ্গি যতই পাল্টে পাল্টে যাক! এই উডবার্ন শরণে কারও বাবা লোকনাথের কথা মনে পড়ছে, তো কেউ রবীন্দ্রনাথে মজেছেন। ‘সারদা, নারদ, কয়লা, গরু পাচারে যখনই বিপদে পড়িবে, আমায় স্মরণ করিও আমি রক্ষা করিব’ কিংবা ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়, উডবার্ন পাশে থেকো’! অনুব্রত মণ্ডল এবং সিবিআই-এর সূত্র ধরে হঠাৎই যেন উডবার্নময়
বাঙালির চেতনা।
নেটরাজ্যে নানা কিসিমের মিম চর্চায় বরাবরই ভাল কাটতি বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। সে অবশ্য তাঁর ক্ষুরধার সংলাপের সৌজন্যে। ‘চড়াম-চড়াম’, ‘গুড় বাতাসা’ বা ‘নকুলদানা’র মতো আপাত নিরীহ শব্দও অনুব্রতর কল্যাণে আলাদা ব্যঞ্জনা পেয়েছে। কিন্তু এ যাত্রা তাঁকে একটি শব্দও খরচ করতে হয়নি। বরং চিকিৎসার রকমারি সরঞ্জাম আঁটা শরীরে চিৎ হয়ে শুয়েই আমবাঙালির নেট-নির্ভর মিম যাপনে ভাইরাল।
প্রশ্ন, কোন ওয়ার্ডে সব থেকে বেশি তৃণমূল নেতা থাকেন?
জবাব: উডবার্ন ওয়ার্ড।
কিংবা বলা হচ্ছে, এসএসকেএম হাসপাতালের নতুন নাম এখন
সুপার স্পেশ্যালিটি বিপত্তারিণী হাসপাতাল।
এর আগেও বার বার দেখা গিয়েছে, নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগে তৃণমূল নেতারা সিবিআই বা ইডি কারও নিশানা হলেই হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়েছেন। কোনও না কোনও সময়ে তৃণমূলের তিন মেয়র— সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম একযোগে উডবার্নে বিরাজমান ছিলেন। মদন মিত্র থেকে আরাবুল ইসলাম — সবারই কখনও না কখনও ঘর-বাড়ি হয়ে উঠেছে এসএসকেএম।
এসএসকেএম হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঠাঁই না-পেয়ে গুরুতর অসুস্থ রোগী গাছতলায় পড়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ রাজনৈতিক নেতারা পটাপট খাস ভিভিআইপি ওয়ার্ড উডবার্নে কার্যত যখন খুশি ঢুকে পড়ছেন। অভিযোগ, এই দৃশ্যটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে রাজ্যে। অবশ্য কোনও কোনও ডাক্তার বলছেন, নেতা-মন্ত্রীরা অসুস্থ হয়ে সরকারি হাসপাতালে গেলে ক্ষতি কী!
একটি মিমে উডবার্ন ও তৃণমূল নেতাদের এই বিচিত্র রসায়নের ব্যাখ্যা দিতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর তুলসী চক্রবর্তী, মলিনাদেবীর ধ্রুপদী দৃশ্যের অবতারণা। মলিনা যেন উডবার্ন ওয়ার্ড। তাঁকে তুলসী বলছেন, কী দেখছ আমার দিকে, আমি তো নতুন নয়!
পেট্রল-ডিজ়েলের দাম সঙ্কট নিয়ে টিপ্পনীকেও এখন ছাপিয়ে গিয়েছে অনুব্রতের মিম। তবে এই মিম-নির্ভরতার মধ্যে কোথাও কি বেদনাও কাজ করে, প্রশ্ন তুলছেন সমাজতত্ত্ববিদেরা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক হিয়া সেন বলছিলেন, “আজকাল সব কিছুতেই খোরাক শব্দটা খুব শুনি! সব কিছু নিয়ে মিম বা খোরাক তৈরিই যেন জীবন।” তাঁর কথায়, “এক দিক দিয়ে এই মিম তৈরি ভালই! লঘু সুরে কথা বলে অন্তত আমরা একেবারেই বোকা নই, সেটা বুঝিয়ে দেওয়া গেল! কিন্তু আক্ষেপও হয়, এই চুটকি বা মিম সর্বস্ব প্রতিবাদে কি চলতি স্থিতাবস্থাকেই আমরা আঁকড়ে ধরছি না! তাতেও অন্যায়গুলো এক রকমের গা-সওয়াও হয়ে যায়!”