পূর্ব বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকের পর সাধারণের মাঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
সরকারি প্রকল্পের সুবিধা কি মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে? জেলা সফরে এবার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, যেখানে সংশয় আছে সেখানে তা নিশ্চিত করতে রেয়াৎ করছেন না দলের জেলা সভাপতি বা মন্ত্রীকেও। স্পষ্ট করে বুঝিয়েও দিচ্ছেন, তাঁদের জন্যই পরিষেবার ১০০ শতাংশ পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
সোমবার পূর্ব বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ পড়লেন মুখ্যমন্ত্রীর এই তোপের মুখে। হাইস্কুলের শিক্ষক কেন দু’টাকা কিলো দরে চাল পান, তা জানতে চেয়েছিলেন স্বপনবাবু। তাঁকে প্রায় ধমক দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একতরফা দোষ দিলে হবে না। প্রত্যেকেরই দোষ আছে। যে পাচ্ছে তোমাদের জন্য পাচ্ছে, যে পাচ্ছে না তোমাদের জন্যই পাচ্ছে না। বারবার যেন ফাউল না হয়, দেখতে হবে।’’ এই বিষয়গুলি মানবিক ভাবে দেখার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা তো ওঁর দোষ নয়। ‘সোশ্যাল ইকনমি সেনসাস রিপোর্ট’ দেখনি কেন, তাহলে এই ভুল হয় না।’’ ১০০ দিনের কাজ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় জেলা শাসককে। কাজ সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যান জানার পরই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জানতে চান, ‘‘যাঁদের জব কার্ড আছে, তাঁরা সকলেই কি কাজ পান?’’ নিজের লক্ষ্য স্পষ্ট করে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেউ কেউ দেখিয়ে দেয় কাজ পেয়েছে। আসলে কাজ পায়নি।’’
‘বাংলা আবাস যোজনা’য় গৃহ প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়েও ভুরিবুরি অভিযোগ রয়েছে। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উপভোক্তাদের তালিকায় ‘ডুপ্লিকেট’ যেন না হয়, গ্রামসভা থেকে তালিকা জমা পড়ার পরে উপভোক্তারা সময়ে টাকা পাচ্ছেন কি না, সেই টাকায় ঘর তৈরি হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে।’’ স্বপনবাবু তখন বলে ওঠেন, ‘‘দোতলা বাড়ি রয়েছে এমন লোকও ঘর পেয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দোতলা বাড়ি যাঁদের তাঁদের নাম ওই তালিকায় কী করে? এলাকায় গিয়ে কাজ করুন। এটা একদম প্রান্তিক লোকেদের জন্য। হয়ত দোতলা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। তাই আবেদন করেছে। প্রত্যেকটা আবেদন আলাদা করে বিচার করতে হবে।’’
জনজাতি শংসাপত্র পেতে গেলে জমির দলিল দেখতে চাওয়া হচ্ছে, এমন কথা ওঠে। মমতা বলেন, ‘‘জন্মগত পরিচয়ের ভিত্তিতেই এই শংসাপত্র প্রাপ্য। দলিল চাওয়া হবে কেন? কেউ কেউ সংশয় তৈরি করে রেখেছে। তাতে হয়রানি হচ্ছে।’’ মানুষের কাছে বোধগম্য, এমনভাবেই ডেঙ্গির মতো বিষয়ে প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।