ফাইল ছবি
যখন-তখন ফি বৃদ্ধি, নানা কারণে মার্কশিট আটকে রাখার মতো নানান অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে মামলা-মকদ্দমা হয়েছে এমনকি অতিমারি পর্বেও। এই অবস্থায় রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির উপরে ‘নজরদারি’র জন্য কোনও প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের ধাঁচেই প্রস্তাবিত ওই কমিশন কাজ করবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।‘‘
এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন মিলেছে। বিষয়টি প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। চূড়ান্ত রূপরেখা এখনও তৈরি হয়নি। অচিরেই এ বিষয়ে বিশদ ভাবে জানানো হবে,’’ সোমবার বলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষা প্রশাসন সূত্রের খবর, বেসরকারি স্কুলগুলির বিরুদ্ধে ফি বৃদ্ধি, মার্কশিট না-দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ আসে সরকারের কাছে। অতঃপর এই ধরনের অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখবে প্রস্তাবিত কমিশন। বেসরকারি স্কুলগুলিকে সেই বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার কথাও বলবে তারা।
বেসরকারি স্কুলগুলিকে ঘিরে নানা অভিযোগে বার বারই সরব হয়েছেন অভিভাবকেরা। ২০১৭ সালের মে মাসে টাউন হলে বেসরকারি স্কুলগুলির কর্মকর্তাদের ডেকে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষাসচিব এবং প্রথম সারির বেসরকারি স্কুলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনি একটি কমিটি তৈরি করে দেন। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই কমিটি বেসরকারি স্কুল নিয়ে বিভিন্ন অভাব, অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। পরে সেই কমিটি থেকে কয়েক জন সদস্য বেরিয়ে যান। কমিটিও ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
এর মধ্যে ২০১৮ সালে বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ন্ত্রণে বিধানসভায় বিল আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তবে মিশনারি স্কুলগুলিতে সরকারি নিয়ম বা নিয়ন্ত্রণ আদৌ বলবৎ করা সম্ভব হবে কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর স্কুল এই বিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শেষ পর্যন্ত সেই বিল আসেনি। এ বার বেসরকারি স্কুলগুলির বিষয়ে কমিশন গঠনে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।
বেসরকারি স্কুলের ফি বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারির জন্য সরকারের শিক্ষা কমিশন গড়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইউনাইটেড গার্জিয়ানস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘‘লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি-সহ নানা বিষয়ে বেসরকারি স্কুলের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে আইন প্রণয়ন ও রেগুলেটরি কমিশন গঠনের দাবি অভিভাবকেরা বার বার জানিয়েছেন সরকারের কাছে। আমরা মনে করি, অভিভাবক আন্দোলনের চাপে বাস্তবের মুখোমুখি হয়েই সরকার শিক্ষা কমিশন গড়ার কথা ভাবছে। আশা করি, সরকার দ্রুত তাদের ভাবনা বাস্তবায়িত করবে।’’
এই বিষয়ে বেসরকারি স্কুল সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘এখনও পুরোটাই আলোচনার স্তরে আছে বলে শুনেছি। আগে সিদ্ধান্ত হোক। তার পরে এই নিয়ে মন্তব্য করব।’’ শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানান, এই ধরনের একটি শিক্ষা কমিশন বছর কয়েক আগে গড়া হয়েছিল। তিনিও সেই কমিটিতে ছিলেন। ছিলেন আরও কয়েকটি বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষেরা। তখন বেসরকারি স্কুলের ফি কাঠামোয় কোনও সাম্য আনা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ‘‘কিন্তু সব বেসরকারি স্কুলের পরিকাঠামো তো সমান হয় না। পড়াশোনার বাইরেও অনেক বেসরকারি স্কুল অন্য অনেক কিছু শেখায়। তাই স্কুলের ফি সমান হয় না। ফি কী রকম হবে। তা অভিভাবকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হয়,’’ বলেন ব্রততীদেবী। তিনি জানান, সেই কমিটিতে ফি-সহ নানা বিষয়ে আলোচনা বেশ কিছু দূর পর্যন্ত এগিয়েছিল। এখন ফের যদি কোনও কমিটি বা কমিশন গঠন করা হয় এবং তার সদস্যেরা হন আমন্ত্রিত, তখন সদর্থক কোনও পদক্ষেপ করার জন্য তাঁরা একসঙ্গে বসবেন।
লা মার্টিনিয়রের সচিব সুপ্রিয় ধর বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এই ধরনের কমিটির বা কমিশনের দরকার নেই। ফি নিয়ে আমাদের স্কুলে কোনও অভিযোগ আসে না। কারণ সবাই জেনেই আসেন আমাদের স্কুলে ফি কত। পড়াশোনা নিয়েও কোনও অভিযোগ ওঠার কথা নয়। কারণ নিয়মিত অভিভাবক ও শিক্ষকদের মিটিং হয়। পড়ুয়ার পড়াশোনার অগ্রগতি কী রকম হচ্ছে আমরা সবসময় অভিভাবকদের জানাই। যে সব পড়ুয়াদের পারিবারিক কোনও বিপর্যয়ে আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, তাদের ফি-তে ছাড়ের প্রয়োজন হলে আমরা ছাড় দিয়ে থাকি। কোনও পড়ুয়ার কোনও অসুবিধা হলে আমরা নিজেরাই মিটিয়ে নিই। এর জন্য তৃতীয় পক্ষের দরকার নেই।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।