প্রতীকী ছবি।
কলকাতার কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য প্রচুর আবেদনপত্র জমা পড়লেও গ্রাম-মফস্সলের ছবিটি অন্য রকম। সেখানকার বিভিন্ন কলেজে ভর্তির আবেদন বেশ কম। প্রশ্ন উঠছে, এর কারণ কী?
এর নানা কারণ উঠে আসছে অধ্যক্ষদের বক্তব্যে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল অতিমারির দীর্ঘকালীন প্রকোপ। করোনার কারণে বহু পরিবারের রোজগার বন্ধ। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পরে কিছু উপার্জন করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোটাই আশু কর্তব্য বলে মনে করছেন অনেক পড়ুয়া। তার উপরে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে কলেজ বন্ধ। কবে খুলবে, তা স্পষ্ট নয়। কলেজেই যেতে না-পেরে পড়াশোনায় ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ কমছে বলেও মনে করছেন অনেকে অধ্যক্ষ। তাঁদের কারও কারও বক্তব্য, 'ডিজিটাল ডিভাইড'-ও এর অন্যতম কারণ। গ্রাম-মফস্লে দুর্বল ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য অনলাইনে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে ভীষণ ভাবে। করোনার ধাক্কা সামলে আবার কবে কী ভাবে কতটা পড়াশোনা করা সম্ভব হবে, সেই দুর্ভাবনা থেকেও কিছু পড়ুয়া কলেজে ভর্তি হতে চাইছেন না বলে অনেক অধ্যক্ষের ধারণা।
ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজে মোট আসন-সংখ্যা ১২২৪। অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রতি বার প্রায় দু'হাজার ভর্তির আবেদন জমা পড়ে। এ বছর ৩২০০ আবেদন এসেছে। কিন্তু এ বার ফর্ম পূরণে কোনও টাকা লাগছে না বলে বহু পড়ুয়া একাধিক বিষয়ে আবেদন করেছেন। তাই ফর্ম যাচাইয়ে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় আবেদনের সংখ্যা কম। তিলকবাবুর বক্তব্য, সম্ভবত করোনার জেরে অনেক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়ায় কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। পরিবারের জন্য কিছু একটা করা বেশি দরকারি বলে মনে করছেন তাঁরা।
সাগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রবীর খাটুয়া জানান, তাঁদের আসন-সংখ্যা ৯০০। প্রতি বার প্রায় ১৪০০ আবেদন জমা পড়ে। এ বার ভর্তির আবেদন ফি মকুবের পরেও সেই সংখ্যা কম। সাগরদ্বীপ এবং তার চার পাশের অঞ্চলে আমপান এবং ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। অনেক পরিবারই জীবিকার খোঁজে চলে গিয়েছে ভিন্ রাজ্যে। বাড়ির ছেলেমেয়েদের আর কলেজে পড়ানোর কথা ভাবছেই না তারা।
নামখানা কলেজের টিচার ইনচার্জ দয়ালচাঁদ সর্দার জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে আসন-সংখ্যা প্রায় ৫৫০। এ বার আবেদনের সংখ্যা কম। এ-পর্যন্ত আসন ভরেছে ৩৮৯টি। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেও ছাত্রীদের একটি বড় অংশ নার্সিং বা ডিএলএড পড়তে চলে যাচ্ছেন। দয়ালবাবুর পর্যবেক্ষণ, কন্যাশ্রীর টাকা পাওয়া সত্ত্বেও কলেজ ছাড়ার প্রবণতা রয়েছে। গত কয়েক বছরে প্রথম সিমেস্টারের ক্লাস শুরুর সময় পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০০-৫৫০ থাকত। কিন্তু দ্বিতীয় সিমেস্টারে কমে হয়ে যেত ২৫০। এ বার কত আসন ভরবে, আপাতত সেটাই তাঁর চিন্তা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি কলেজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অধ্যক্ষ জানান, গ্রামের দিকে মানুষের হাতে টাকা নেই। তাঁর কলেজে ছাত্রীই বেশি। তাঁদের অনেকেই ভর্তি হন স্রেফ কন্যাশ্রীর টাকা পাওয়ার আশায়। কিন্তু সেই টাকা পাওয়ার পরেও এ বার ভর্তিতে ভাটার টান। ফাঁকা পড়ে আছে বহু আসন।