—প্রতীকী ছবি।
কয়লা পাচারে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে প্রথমেই উঠে এসেছিল তাঁর নাম। তিন বছর আগে ইডি এবং সিবিআই কয়লা পাচারের তদন্তে নামলেও এখনও সেই অনুপ মাজি ওরফে লালাকে ধরতে পারেনি তারা।
কয়লা পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই প্রায় ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে ইডি ও সিবিআই। প্রাথমিক তদন্ত শেষে যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, তাতে নাম রয়েছে প্রায় ৩০ জনের। লালার নামও রয়েছে। ইডি ও সিবিআই তাঁকে বহু বার জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইনি রক্ষাকবচ নিয়ে রাখায় লালাকে গ্রেফতার করা যায়নি।
সম্প্রতি কয়লা পাচার মামলায় লালা-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত সিআইএসএফ কর্মী শ্যামল সিংহ এবং লালা-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্নেহাশিস তালুকদারের বাড়িতে ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। সেই নথিকে সামনে রেখে তাঁরা এ বার শীর্ষ আদালতে লালার আইনি রক্ষাকবচ খারিজের আবেদন করতে চান বলে জানিয়েছেন সিবিআইয়ের এক কর্তা।
সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, "লালাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলে প্রভাবশালী, পুলিশ কর্তা, সিআইএসএফ জওয়ানদের একাংশের জড়িত থাকার আরও তথ্যপ্রমাণ হাতে আসতে পারে।’’
কয়লা পাচারের কালো টাকার একটি অংশ সিআইএসএফ জওয়ানদের সম্পত্তিতেও বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সিবিআই সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী, শ্যামল ও স্নেহাশিস লালা-ঘনিষ্ঠ। তাঁদের দুর্গাপুর, মালদহ এবং কলকাতার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। মূলত ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কেনা নামে-বেনামে থাকা সম্পত্তির হদিস মিলেছে সেখানে। দু’জনকে আটক করে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, তাঁদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিসও পাওয়া গিয়েছে। সিবিআই সূত্রের দাবি, শ্যামল ও স্নেহাশিসের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির নথি যেমন যাচাই করা হচ্ছে, তেমনই তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, "কয়লা পাচারে রাজ্য পুলিশের কর্তাব্যক্তি এবং নিচুতলার পুলিশের একাংশ জড়িত ছিলেন। ইতিমধ্যেই তাঁদের বেশ কয়েক জনকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক তদন্তে উঠে আসা কিছু নথির ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, সিআইএসএফ-এর নিচুতলার জওয়ানদের পাশাপাশি কয়লা পাচারে উচ্চপদস্থ কর্তারাও জড়িত রয়েছেন।’’ এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ২০১৭ থেকে ২০২০, এই চার বছর দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এলাকায় বেপরোয়া ভাবে রাজ্য পুলিশের একাংশ ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কয়লা পাচার চক্র চালিয়েছিলেন লালা। একাধিক সিআইএসএফ জওয়ান সেই পাচারে জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। মাস ছয়েক আগে এক অবসরপ্রাপ্ত সিআইএসএফ কর্মীকে এই কারণে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, লালার নির্দেশে সিআইএসএফ জওয়ানদের একাংশ পুলিশ এবং সিআইএসএফ কর্তাদের কাছে কয়লা পাচারের টাকা ‘ভেট’ হিসেবে পৌঁছে দিতেন।