মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রশ্নে তৃণমূল এবং বিজেপির অবস্থান বরাবরই একেবারে বিপরীত। তৃণমূল মনে করে, এ দেশে বসবাসকারী ভোটদাতা, করদাতা, সম্পত্তির মালিক এবং তাঁদের পরিবারবর্গ সবাই নাগরিক। তাই রাজ্যে নতুন করে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগের কোনও প্রয়োজন দেখেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে তাঁদের বিরোধ নির্বাচনী প্রচারেও গুরুত্ব পেয়েছে। এই অবস্থায় শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি মন্তব্য বিষয়টিতে নয়া মাত্রা যোগ করল। অশোকনগরে এ দিন দিলীপবাবু বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা ছাড়া রাজ্যে সিএএ দ্রুত কার্যকর করা যাবে না। কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করা কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপরে নির্ভর করে? দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।’’
দিলীপবাবু এ দিন অশোকনগরে দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে যোগ দিতে এসে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে সিএএ রাজ্যে তাড়াতাড়ি কার্যকর হয়ে যাবে। না হলে কেন্দ্রীয় সরকারের যখন সুবিধা হবে, লকডাউন কেটে যাবে, তখন কার্যকর করা যাবে।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, সিএএ চালু করার ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবে বড় বিরোধিতা হতে পারে, আঁচ করেই দিলীপবাবুর মতো বিজেপি নেতা কিছুটা ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ অবস্থান থেকে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। যাতে, মতুয়া পাড়ায় গিয়ে নাগরিকত্ব বিধি জারির ইচ্ছা প্রকাশ করা যায়। আবার তা না করতে পারার একটি সাফাইও দিয়ে রাখা যায়। কারণ, গাইঘাটার ঠাকুরনগরে বিধানসভা ভোটের প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোট মিটলে এবং করোনার টিকাকরণের কাজ শেষ হলে সিএএ মেনে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও সে ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে এলাকায় অভিযোগ। ফলে, সেখানে ক্ষোভ আছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য এ দিনও ফের বলেন, ‘‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার প্রয়োজন নেই। আমরা তা করতে দেব না। আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে। আমরা ভোট দিই। আমরা সকলেই নাগরিক। তাই নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রশ্ন নেই।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘দিলীপবাবুর রাজনৈতিক পরিপক্কতা নেই। ওঁর উচিত সিএএ, এনপিআর, এনআরসি নিয়ে ভাল করে পড়াশোনা করা!’’