লোকসভা ভোটের পরে এ বার রাজ্যের তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত বিধায়কদের ডেকে আলোচনায় বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে আজ, মঙ্গলবার বিধানসভায় ওই বৈঠক হওয়ার কথা। তৃণমূলের সরকার আসার পরে সব দলের তফসিলি বিধায়কদের নিয়ে এমন বৈঠক এই প্রথম। সরকারি বৈঠকে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের ডাক পাওয়াও এই জমানায় দীর্ঘ দিন পরে ঘটছে।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, তফসিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণিভুক্ত মানুষের কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, তা নিয়েই সব দলের বিধায়কদের সঙ্গে মুখোমুখি আলাপচারিতায় বসতে চান মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরা অবশ্য মনে করছে, লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখেই এমন উদ্যোগের কথা মাথায় এসেছে সরকারের। লোকসভা ভোটে এ বার তফসিলি এলাকায় তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছে এবং ততটাই ভাল ফল করেছে বিজেপি। দক্ষিণবঙ্গে মতুয়া এলাকা, রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহলের জনজাতি সম্প্রদায় বা উত্তরবঙ্গের রাজবংশী— নানা অংশের মানুষের সমর্থন গেরুয়া শিবিরের দিকে গিয়েছে। তার পরেই তফসিলি কেন্দ্রগুলির মানুষের মন বুঝতে মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে উদ্যোগী হয়েছেন বলে বিরোধীদের অভিমত।
শাসক ও বিরোধী, সব পক্ষের বিধায়কদের কাছেই এই বৈঠকের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও-রা। এমনকি, বৈঠকের সময় সম্পর্কে অবহিত করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক সোমবার ফোন করেছেন বিধায়কদের। ইদানীং কালে জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ডাক পাননি বিরোধী দলের বিধায়ক বা অন্য জনপ্রতিনিধিরা। তাঁরা তা নিয়ে একাধিক বার ক্ষোভপ্রকাশও করেছেন। এখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য এমন ‘আপ্যায়ন’ পেয়ে বিরোধী বিধায়কেরা অনেকেই বেশ বিস্মিত! আগে যে তাঁদের কথা শোনার জন্য সরকার ডাকত না এবং এখন ‘চাপে পড়ে’ ডাকা হচ্ছে, এই কথা আজকের বৈঠকে তুলে দেওয়ার জন্যও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বিরোধী শিবিরে।
রাজ্যের মোট ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৮টি তফসিলি জাতি এবং ১৬টি তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত। তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটেও ওই কেন্দ্রগুলির সিংহভাগ দখলে রেখেছিল তৃণমূল। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের জনজাতি এলাকায় শাসক দলের প্রথম ধাক্কা খাওয়া শুরু হয়। লোকসভা ভোটে এ বার উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার অনেকাংশে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে। আবার সন্দেশখালিতে সংঘর্যের ঘটনার পরে এলাকায় ঘুরে গিয়েছে জাতীয় তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশন। এই প্রেক্ষিতেই এমন বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ ধরা হচ্ছে।
শাসক শিবিরের এক বিধায়ক অবশ্য বলছেন, ‘‘সারা দেশেই তফসিলি মানুষের অধিকার বিপন্ন। এমতাবস্থায় রাজ্যে ওই অংশের মানুষের সমস্যা জানতে চায় সরকার।’’