রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটিতে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি। সোমবার রাজ্য সরকারের সেই অধ্যাদেশ প্রকাশ্যে এসেছে। অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স)-টি ইতিমধ্যেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সায় পেয়েছে। অধ্যাদেশে সই করেছেন তিনি। রাজভবন থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরেই বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’ (জুটা)-র তরফে সোমবার নয়া ওই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করা হয়েছে।
নতুন নিয়মে পুনর্গঠন করা হয়েছে উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটিকে। ৩ সদস্যের পরিবর্তে ৫ জনকে রাখা হয়েছে। ফিরিয়ে আনা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর প্রতিনিধিকেও। সঙ্গে থাকবেন রাজ্যপাল তথা আচার্যের প্রতিনিধি, উচ্চশিক্ষা দফতর এবং উচ্চশিক্ষা সংসদের এক জন করে প্রতিনিধি থাকবেন। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটিতে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর এক প্রতিনিধিও। সার্চ কমিটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বাদ যাচ্ছেন।
ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান হবেন রাজ্যপালের প্রতিনিধি। ৫ জন প্রতিনিধিকে নিয়েই তৈরি হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটি। যদিও সার্চ কমিটির গঠন থেকে বাদ দেওয়া হবে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কোর্ট বা সেনেটের মনোনীত প্রতিনিধিদের। মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য হিসাবে নিয়োগের বিলে রাজ্যপালের আপাতত সই করার সম্ভাবনা নেই। যা দেখেই উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটিতে বদল ও সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ বলে মনে করছে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সরকার বিরোধী সংগঠনগুলি। তাদের কথায়, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতেই কৌশলগত ভাবে নতুন সার্চ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় সোমবার বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম যে, উপাচার্যের সার্চ কমিটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে ইউজিসির প্রস্তাবিত সার্চ কমিটিকে অগ্রাহ্য করে। এটি একেবারেই বেআইনি। শুধু তা-ই নয়, সার্চ কমিটি যাতে রাজনৈতিক ভাবে রাজ্য সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ যদিও রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরের একটি সূত্রের খবর, ইউজিসির নির্দেশ অনুযায়ী এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকার সময় গত বছর বিধানসভার বাদল অধিবেশনে উপাচার্য পদে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর জন্য বিধানসভায় একগুচ্ছ বিল পাশ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু ধনখড়ের পর লা গণেশন হয়ে সিভি আনন্দ বোস রাজভবনে এলেও সেই বিলে স্বাক্ষর করেননি কেউই। তাই বিকল্প পথে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্য সরকার নিজেদের হাতে নিল বলেই অভিযোগ বিরোধীদের।