(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
আর জি কর-কাণ্ডের পরে ধর্ষণ মোকাবিলায় কঠোর আইন এবং সেই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা চিঠি দিয়ে কেন্দ্র অভিযোগ করেছিল, ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ বিশেষ আদালত গঠনের কাজ কার্যত থমকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেই। ফের এক বার মোদীকে চিঠি দিয়ে মমতা দাবি করলেন, সেই কাজ রাজ্যে চলছে এবং তা রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকেই। একই সঙ্গে কঠোর আইনের দাবিতে ফের এক বার সরব হয়েছেন মমতা। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী শুক্রবার ফের মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিয়ে লিখেছেন, বতর্মান আইন ও বিচার প্রক্রিয়া ঠিক ভাবে মেনে চললেই অপরাধের মোকাবিলা সম্ভব।
তবে প্রথম চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি তুলেছিলেন। তাঁর পাঠানো দ্বিতীয় চিঠিতে মমতার বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার মতো ব্যবস্থা করতে হবে কেন্দ্রকে।
মোদীকে পাঠানো এ দিনের চিঠিতে মমতার অভিযোগ, ‘সংবেদনশীল’ এমন একটি বিষয়ে কঠোর আইনের দাবি সংবলিত তাঁর আগের চিঠিটির জবাব এখনও দেয়নি কেন্দ্র। সেই সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ১০টি বিশেষ পকসো আদালত তৈরির অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য। এখন ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট এবং ৬২টি পকসো আদালত রাজ্যে কাজ করছে। মমতা মোদীকে জানিয়েছেন, ফাস্ট ট্র্যাক আদালতগুলিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় আধিকারিকদের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা যায় কেন্দ্রীয় নিয়মে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ— মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী স্থায়ী আধিকারিক নিয়োগ করা প্রয়োজন। তার জন্য দরকার কেন্দ্রের অধীনে পরীক্ষা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া। মমতার আরও দাবি, নারী সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় হেল্পলাইন নম্বরগুলি সক্রিয় রয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অন্নপূর্ণা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় চিঠির জবাবে লিখেছেন, ‘আপনাকে ফের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বর্তমান কেন্দ্রীয় আইনগুলি ম মহিলাদের উপরে নির্যাতন ও অপরাধ মোকাবিলায় যথেষ্ট কড়া। রাজ্য সরকার ওই আইনগুলি সব রকম ভাবে মেনে চললে ফৌজদারি অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া পোক্ত হবে বলেই মনে করি’।
মুখ্যমন্ত্রীর ফের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় এক্স হ্যান্ড্লে মন্তব্য করেছেন, ‘‘চিঠি লেখা বন্ধ করুন। প্রশ্নের উত্তর দিন। কারণ, আপনি দায়বদ্ধ!’’ কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী অন্নপূর্ণা মুখ্যমন্ত্রীর আগের চিঠির জবাবে রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক আদালত ও অন্যান্য বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা মেনে চলার ব্যাপারে যে তথ্য দিয়েছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশিই তাঁর দাবি, বাংলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭টি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ এসেছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এখন বারবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন, কখনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাঁর ছেলের সাফল্যের জন্য। বিপদে পড়ে নিজে বাঁচতে চাইছেন, তাই এ সব করছেন!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও এ দিন বলেছেন, ‘‘এত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে কুম্ভকর্ণের ঘুম এখন ভাঙল! দু-দু’বার চিঠি দিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। আর জি করের ঘটনায় আন্দোলন বড় চেহারা নেওয়ার পরে তিনি এই চিঠি লেখাকে হাতিয়ার করতে চাইছেন।’’
এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যেমন প্রধানমন্ত্রীকে ফের চিঠি দিয়েছেন, তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এক্স হ্যান্ড্লে মোদীর উদ্দেশে জানিয়েছেন, কার্যকরী ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের ক্ষেত্রে বাংলা দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে, এই তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারই সংসদে প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল।